পুত্ররূপে একবার আইছিলা, চইলা গেলা। ধইরা রাখতে ত পারলাম না। আইজ আবার কেনে সেই স্মৃতি মনে জাগাইয়া তুল্লা। ভুলতে দাও হরি, ভুলতে দাও! যা বাবা, কার ছেলে তুই জানি না, মায়ের ছেলে মায়ের কোলে ফিরা যা। আমার অখন অনেক কাজ। গোষ্ঠের সময় হইয়া আইল; যাই বাছারে আমার গোষ্ঠে পাঠাই গিয়া।’
খেলাঘরের মত ছোট একটা মন্দির। সে ঘরে একখানা রাধাকৃষ্ণ ঠাকুর, আর সালুকাপড়ে মোড়া খানদুই পুঁথি। সেখানে গিয়া সে গান ধরিল, ‘মরি হায়রে কিবা শোভা! রাখালগণ ডাকতে আছে ঘনঘন বৃন্দাবনে।’
একটু পরে প্রশস্ত সূর্যালোকে পাড়াটা ঝলকিত হইয়া উঠিল। ঘরে ঘরে জাগিয়া উঠিল কর্মচাঞ্চল্য। এখানে হাটবাজার নাই। এ গাঁয়ের মালোরা দূরের হাটবাজারে মাছ বেচিয়া আসে। সূতাকাটা, বাঁশের জাল বোনা, ছেঁড়া জাল গড়া, জালে গাব দেওয়া,—কারো বাড়িতে অবসর নাই। অন্তঃপুরের মেয়েদেরও অবসর নাই। নানারকম মাছের নানারকম ভাজাভুজি ঝোলঝাল রাঁধিতে রাঁধিতে তারা গলদঘর্ম হয়। দুপুর গড়াইয়া যায়। পুরুষেরা সকালে পান্তা খাইয়া কাজে মাতিয়াছিল, মায়েদের আদেশে ছেলেরা গিয়া জানায়, ভাত হইয়াছে, স্নান কর গিয়া। জলে ডুব দিয়া আসিয়া তারা খাইতে বসে। তারপর শুইয়া কতক্ষণ ঘুমায়, সন্ধ্যায় আবার জাল দড়ি কাঁধে করিয়া নৌকায় গিয়া ওঠে। বিরাম নাই।