উদয়তারার এক ননাসের নাম ছিল মনসা। তাই মনসাপূজা বলিতে পারে না। স্বামী যেমন মান্য, স্বামীর বড় বোনও তেমনি মান্য। সে কনে-বৌটিকে লক্ষ্য করিয়া বলিল, ‘শাওনাই পূজা ত হইয়া গেল ভইন, সাম্নে আছে আর নাও-দৌড়ানি। বড় ভাল লাগে এইসব পূজা-পালি হুড়ুম-দুড়ুম নিয়া থাকতে।’
কনে-বৌ মাথার ঘোমটা ফেলিয়া দিয়া কাঁসের থালায় ধানদূর্বা পঞ্চপ্রদীপ ইত্যাদি তুলিতে তুলিতে বলিল, ‘তারপর কত পূজাই ত আছে—দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা, কার্তিকপূজা, ভাইফোঁটা’—
‘কিন্তু তা ত কত পরের কথা। শাওন মাস, ভাদর মাস, তারপরে ত আইব বড় ঠাকরাইন পূজা।’
কিন্তু দুই মাস ত মোটে—তেমন কি বেশি। ক্ষেতপাথারের জল কমিতে লাগিবে পনর দিন। তিতাসের জল কমিয়া তার পাড়ে পাড়ে পথ পড়িতে লাগিবে আরও পনর দিন। তখন বর্ষা শেষ হইয়া যাইবে। গাঙ-বিলের দিকে চাও, দেখিবে পরিষ্কার—দিনের দিকে চাও, পরিষ্কার। কিন্তু ঘর বাড়ির দিকে চাও—পরিষ্কার দেখ কি! দেখ না। পরিষ্কার না করিলে পরিষ্কার দেখিবে কি করিয়া! চারিদিকে পূজা-পূজা ভাব। লাগিয়া যাও ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার কাজে! কিন্তু কি ঘরবাড়ি পরিষ্কার করিবে তুমি? ভাঙ্গা ঘরবাড়ি? না, পুরুষ আছে কোন্ দিনের তরে? বর্ষাকালে একটানা বৃষ্টির জলে ধা’র ভাঙ্গিয়াছে, পিঁড়া ভাঙ্গিয়াছে,