পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৪
তিতাস একটি নদীর নাম

ঘনঘন তুফানের ঠেলায় বেড়াগুলি মুচড়াইয়া গিয়াছে। পুরুষেরা ছন আনিবে মূলি আনিবে, বাঁশ আনিবে বেত আনিবে—আনিয়া ঘরদুয়ার ঠিক করিয়া দিবে, তারপর মেয়ে-বৌরা তিতাসের পারের নরম সোঁদাল মাটি আনিয়া ধা’র-পিঁড়া ঠিক করিবে, লেপিবে পুঁছিবে, আরসির মত ঝক্‌ঝকে তক্‌তকে করিবে—তাতেও কোন্-না পনর দিন লাগিবে? বাকি পনর দিনের মধ্যে সাত দিনে কাঁথা কাপড় কাঁচিবে, চাটাই মাদুর ধুইবে, তারপর সাতদিন বাকি থাকিতে তেল-সাবান মাখিয়া দেবী হইয়া বসিয়া থাকিবে—দিন আবার ফুরায় না!

 ‘কি লা উদি, কথা কস্ না যে? দিন ফুরায় না!’

 একটু আগে এই মেয়েটি তাকে সাত পাক ঘুরিয়াছে; পঞ্চপ্রদীপ তার কপালের কাছখানে ঠেকাইয়া লইয়া তাহা আবার নিজের কপালে ঠেকাইয়াছে, কতকগুলি খই আর অতসী ফুল তার মাথার উপর ছিটাইয়া দিয়াছে—সত্যিকারের বিবাহের মতই ভাবভঙ্গি দেখাইয়াছে—অথচ অনেক অর্থহীন অনুষ্ঠানের মত ইহা একটি পূজাবিশেষের অনুষ্ঠান মাত্র। কিন্তু কি মজার অনুষ্ঠান! সাত বছর আগের কথা মনে করাইয়া দেয়। সেদিন উদয়তারার সামনে বসিয়া ছিল, অজানা একটা নূতন পুরুষ মানুষ—চুলদাড়ি সুন্দর করিয়া ছাঁটা, মাথায় জবজবে তেল দিয়া বাঁকা টেরি কাটা—নূতন কাপড়ে তাকে সেদিন দেবতার মত দেখা গিয়াছিল। বাস্তবিক বিবাহের দিনে পুরুষ মানুষকে কত সুন্দরই না দেখায়। তাকেও