পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৬
তিতাস একটি নদীর নাম

মাসী তার একান্তই অসহায়। তিক্তবিরক্ত বাপ মার অনাত্মীয় পরিবেশে সে নিতান্তই অসহায়। অতীতের সঙ্গে তার বর্তমানের যে যোগ-সূত্র আছে, ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াইয়া সে-সূত্র ছিন্ন বিচ্ছিন্ন। একটা নগণ্য খড়কুটার মতই সেও সময়ের মহাস্রোতে ভাসিয়া চলিয়াছে। তিতাসের জলে হাজারো খড়কুটা ভাসিয়া যায়; কিন্তু কোন না কোন মালোর জালে তারা আটকা পড়িবেই পড়িবে। কিন্তু মাসীর ভবিষ্যৎ কোন অবলম্বনের গায়েই আটকা পড়িবে না। আর উদয়তারা? অনেক বেদনা তার মনে জমা হইয়া আছে, কিন্তু বড় কঠিন এ নারী। হাস্য পরিহাসে, প্রবাদে শ্লোকে সব বেদনা ঢাকিয়া সে নারী সব সময়ে মুখের হাসি নিয়া চলে। তাহাকে জব্দ করিবে এমন দুঃখ বুঝি বিধাতাও সৃষ্টি করিতে পারে নাই। মাসী তার মত সকল দুঃখকে অগ্রাহ্য করিয়া চলিবার ক্ষমতা পাইল না কেন? হায়, তাহা যদি সে পাইত, অনন্তর মন অনেক ভাবনা হইতে নিষ্কৃতি পাইত। আর এই হাস্যচঞ্চল মেয়েটি। এর জীবন সবে শুরু হইয়াছে। সে নিজে যেমন চাঁদের রোশনি, তেমনি অনেক থমথমে আকাশের তারাকে সে কাননের ফুলের মত বোঁটায় আঘাত করিয়া ফুটাইয়া ছিটাইয়া হাসাইতে মাতাইতে সক্ষম। সে যদি সব সময় তার সঙ্গে সঙ্গে থাকিতে পারিত। তবে তার মনের ম্লানিমাটুকু একটু একটু করিয়া ক্ষয় হইয়া যাইত।

 মেয়েটি হঠাৎ হাসিতে ফাটিয়া পড়িল। অনন্ত চম্‌কাইয়া উঠিয়া বলিল, ‘হাস কেনে?’