জমির চাষীরা ধানকাটা শেষ করিয়া ভারে ভারে ধান এদিক ওদিকের গ্রামগুলিতে বহিয়া নিয়া চলে। তারা তিতাসের ঠিক পাড়ে থাকে না। থাকে একটু দূরে। একটু ভিতরের দিকে। সেখান হইতে মাঘের গোড়ায় আবার তারা তীরে তীরে সর্ষে বেগুনের চারা লাগায়। তীরের যেখানে যেখানে বালিমাটির চর, সেখানে তারা আলুর চাষ করে। এ মাটিতে সকরকন্দ আলু ফলায় অজস্র।
জোবেদ আলীর জোয়ান ছেলেরা ওপারে আলু লাগাইয়া তিন ভাইয়ে এক-সমানে আলী আলী আলী বলিয়া তাদের লম্বা ডিঙ্গিখানা ভাসাইয়া তাতে উঠিয়া পড়িল। বেলা পড়িয়া আসিয়াছে। হালের চারিজোড়া বলদ ও দুইজোড়া ষাঁড় পার করাইতে হইবে। সে কাজ করিবে তাদের মুনীস-দুইজন। সারা বছর তারা জোবেদ আলীর বাড়িতে জন খাটে। খায় দায়, মাহিনা পায়। সারাদিন—ভোর হইতে রাত-অবধি খাটে, রাতের খানিকটা সময় গিয়া নিজেদের বাড়িতে পরিবারের সান্নিধ্য লাভ করিয়া আসে। দিনমানে আর দেখা হয় না। পরিবারেরাও এর বাড়ি ওর বাড়ি ধান ভানিয়া পাট গুটাইয়া কিছু-কিঞ্চিৎ উপায় করে। এইভাবে দিন গুজরায় তারা। কাজেই জোবেদ আলীর ছেলেরা যখন আলী আলী আলী বলিয়া নৌকায় নদী পার হইতে থাকে, মুনীস-দুইজন তখন চারিজোড়া বলদ ও দুইজোড়া ষাঁড়ের অনিচ্ছুক দেহমন শীতের জলে নামাইয়া মাথায় পাগড়ি বাঁধিয়া গরুদের ল্যাজে ধরিয়া