পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৩২৩

 ঘাটে নানা বয়সের স্ত্রীলোকেরা নাইতে ধুইতে আসিয়াছিল, কেউ কেউ বলিল—‘কি রকম কুয়ারা করে দেখ্।’

 —‘হইব না? কম বয়সে পুলা পাইছে, পেটে থুইব না পিঠে থুইব দিশ্ করতে পারে না।’

 জল হইতে উঠিয়া ছেলের গা মুছাইয়া ছোট দুই-হাতি লুঙ্গিখানা পরাইয়া বলিল, ‘এইবার হাঁইট্যা যা।’

 কয়েক পা আগাইয়া শক্ত মাটিতে পা দিয়া দেখে আগুনের মত গরম। পা ছোঁয়াইলে পুড়িয়া যাইতে চায়। করুণ চোখে বাপের মুখের দিকে চাহিয়া বলে, ‘বাপ্ আমারে কোলে নে, হাঁটতে পারি না।’

 বাপের কোলে চড়িয়া তার বুকের লোমগুলির মধ্যে কচি গালটুকু ঘষিতে ঘষিতে রমু বলিল, ‘বাপ, তুই আমারে খড়ম কিন্যা দে। এমুন ছোট্ট ছোট্ট দুইখান খড়ম, তা হইলে আর ত'র কোলে উঠতে চামু না।’

 ‘পাওয়ে গরম লাগে! ওরে আমার মুন্‌শীর পুত্ রে! পাওয়ে গরম লাগ্‌লে জমিনে কাম করবি কেমনে?’

 উঠানে পা দিবার আরেকটু বাকি আছে। তিতাস হইতে এক চিলতা খাল গ্রামখানাকে পাশ কাটাইয়া সোজা উত্তর দিকে গিয়াছে। মেটে হাঁড়ি-কলসী বোঝাই একটা নৌকা জোয়ারের সময় খালে ঢুকিয়া পড়িয়াছিল, ভাঁটায় আটকা পড়িয়াছে। লাল-কালো হাঁড়িগুলি খালের পাড় ছাড়াইয়া উঁচু হইয়া উঠিয়াছে। এখান হইতে দেখা যায়, রোদে সেগুলি চিক্‌ চিক্‌ করিতেছে। সেদিকে আঙ্গুল বাড়াইয়।