পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
তিতাস একটি নদীর নাম

আল্লা আল্লা মোমিন বলিয়া সাঁতার দেয়। সকালে এপার হইতে ওপার যাইবার বেলা লাঙ্গল কাঁধে করিয়া সর্ষে ক্ষেতগুলির আলের উপর দিয়া গিয়াছে। তীর-অবধি সর্ষেফুলের হলদে জৌলুষে হাসিয়া উঠিয়াছিল। মনে হইয়াছিল কে বুঝি তিতাসের কাঁধে নক্সা-করা উড়ানি পরাইয়া রাখিয়াছে। অর্বাচীন গরুগুলি পাছে তাতে মুখ দেয়, তার জন্য কত না ছিল সতর্কতা। এখন এ-পারে উঠিয়া গায়ের জল মুছিতে মুছিতে চারিদিক আঁধার হইয়া আসে। আঁধারে সব একাকার, গরু কোথায় মুখ দিবে! দিনের শ্রমে শ্রান্ত গরু। আর শ্রান্ত এ দুইজন মানুষ সারাদিন অসুরের বল নিয়া ক্ষেতে খাটিয়াছে। এবার বাড়িতে যাইবে। তাই এত ব্যস্ততা। কিন্তু কার বাড়িতে যাইবে! তাদের প্রভু জোবেদ আলীর বাড়িতে। নিজের বাড়িতে নয়। পাখিরাও এ সময় নিজের বাসায় যায়। তারা যাইবে মুনিবের বাড়িতে। গিয়া গোয়ালে গরু বাঁধিবে। ঘাস কাটিবে। মাড় দিবে, খইল ভুষি দিবে। জোতদার চাষীর বাড়িতে কত কাজ। এটা সেটা টুকিটাকি কাজ করিতে করিতে হাজারগণ্ডা কাজ হইয়া যায়। প্রকাণ্ড চওড়া উঠান। চার ভিটায় বড় বড় চারিটা ঘর। বাহিরের দিকে গোয়ালসুদ্ধ আরো তিন-চারিটা ঘর। দড়ি পাকানো হইতে বেড়াবাঁধা পর্যন্ত এই এতবড় বাড়িতে কত কাজ যে এই দুইজনের জন্য অপেক্ষা করিয়া থাকে। কাজ করিতে করিতে রাত বাড়িয়া চলে। এক সময় ডাক আসে—‘অ করমালী অ বন্দালী খাইয়া যাও!’