করিতে করিতে বেলাটুকু ফুরাইল; নবমী তিথির ঝাপসা চাঁদের আলোয় সেই উঠান চক্চক্ করিয়া উঠিল। এমন সময় দেখা গেল খালের কিনারা হইতে গোপাটের পথ ধরিয়া একটা লোক আগাইয়া আসিতে আসিতে একেবারে উঠানের কোণে আসিয়া পা দিল। চার ভিটায় চারখানা বড় ঘর। কোণা-খামচিতে আরো ছোট ছোট ঘর কয়েকখানা আছে। উঠানের পূর্ব-দক্ষিণ কোণ দিয়া দুইঘরের ছায়ায় আসিয়া লোকটা থমকিয়া দাঁড়াইল, চাপা গলায় ডাক দিল—‘পেশ্কারের মা, অ, খুশী!’
খুশী ঝাঁটা নামাইয়া আগাইয়া আসিল, ‘বা’জান তুমি?’
‘হ, আমি।’
‘ঘরে আইঅ।’
হাঁ, ঘরেই আসিব, এবার আর বাহিরে থাকিব না। পিঠে ‘গাতি’ বাঁধিয়া আসিয়াছি; গালাগালি করিলে আমিও করিব; মারামারি করিলে আমিও মারিব। আমি তৈয়ার।
খুশী অপমানে মাথা নিচু করিল।
গহনার দেনা মিটাইতে পারে নাই বলিয়া তার বাপ এমন চোরের মত আসে।
‘তোর পেশ্কার কই?’
উত্তরের ঘরে বাপের সাথে কিচ্ছা শুনিতেছে।
‘ও, বড় পেশ্কার কই?’
খুশী ফিক্ করিয়া একটু হাসিল, ‘হউরের কথা কও! বাজারে গেছে।’