জমিনের ধূলা। সব কিছু বাঁচাইয়া পথ চলিতে মাগন সরকারের মন চিন্তায় উদ্বেল হইয়া উঠিল। এ মাঠেও তার অনেক জমি আছে। কত জমি, সে নিজেই অনেক সময় ঠাহর রাখিতে পারে না। মাঝে মাঝে গোলাইয়া যায়, কত জমি সে করিয়াছে; কিন্তু কি করিয়া সে-সব জমি করিয়াছে, সে-খবর জ্বলন্ত অঙ্গারের মতই তার চোখের সামনে আজ যেন জ্বল্জ্বল্ করিয়া দুই একবার জ্বলিয়া উঠিল।
এমন সময় পথে রশিদ মোড়লের সঙ্গে দেখা।
রশিদ মোড়লের খালি পা, লুঙ্গি পরা, গায়ে একটা ফতুয়া। বয়সে মাগন সরকারের মতই প্রবীণ।
‘রসিদ ভাই!’
‘কি?’
‘দোলগোবিন্দ সা’র খবর শুন্ছ ত?’
‘তা আর শুন্ছি না। কলিকাতা থাইক্যা তার ভাতিজার নামে চিঠি আইছে।’
‘অবস্থা নাকি খারাপ?’
‘হ। একেবারে হাতে-বৈঠা-ঘাটে-নাও অবস্থা।’
‘কি হইব দাদা!’
‘কি আর হইব, মরব!’
‘মইরা কি হইব?’
রশিদ একটু হাসিল, কিন্তু জানিল না যে, মাগনের একটা ক্ষীণ দীর্ঘশ্বাস তিতাসের ছোট ঢেউয়ের মত বাতাসে একটু ঢেউ খেলাইয়া দিয়া গেল!