পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪২
তিতাস একটি নদীর নাম

 একদিন তিতাসের পারে গিয়া দেখে, দূর হইতে একখানা কাঠের ‘চালি’ ভাসিয়া আসিতেছে, ভেলার মত। তাহাতে ছোট একখানা ছই।

 সেই দুজনকেও দেখা গেল। তারা চালির দুই পাশ হইতে মোট লগি ঠেলিতেছে। সেই ঈশ্বর মালো আর ইচ্ছারাম মালো নামে রূপকথার মানুষ দুইটা। পাহাড় পর্বত ভাঙ্গিয়া, খালবিল ডিঙ্গাইয়া, কত দেশদেশান্তরের বুক চিরিয়া তারা যেন এক বোঝাই গল্প লইয়া আসিয়াছে। ছোট ছইখানার ভিতরে দুইজনার সংক্ষিপ্ত ঘরকরনা। পরণে দুইজনেরই এক একখানা গামছা, গা মসৃণ কালো। শুশুকের মতই যেন জল হইতে ভাসিয়া উঠিয়া কাঠের চালিতে লগি ঠেলিতেছে। কাঠ বিক্রি হইয়া গেলে, আবার যখন শুশুকের মতো একডুবে জলের ভিতর তলাইয়া যাইবে, তখন আর তাহাদের কোন চিহ্নই জলের বাহিরের এই সংসারে দেখিতে পাওয়া যাইবে না।

 ছাদিরের সঙ্গে সামান্য দুই একটি কথাবার্তা শেষ করিয়া অল্প সময়ের মধ্যেই তাহারা প্রকাণ্ড একটা গুঁড়ি, চালির বাঁধন হইতে খুলিয়া রাখিয়া আবার আগাইয়া চলিল। ছাদির বলিতেছিল, মালোর পুত, আজ দুপুরে এখানে পাকসাক কর, থাক, খাও, কাল ফজরে উঠিয়া চালি চালাইও।

 শুধু একটি মাত্র কথা তাহারা বলিল, না শেখের পুত্। এখানে চালি থামাইব না, রমারম্ গোকনের ঘাটে গিয়া পাক বসাইব।

 বলিয়াই তাহার লগি ঠেলা দিল। মুখে কত বড় ব্যস্ততা