পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৩৪৩

কিন্তু চলনে কতখানি ধীর! কোন্ আদিম যুগের যেন যান একখানা, একালের চলার দ্রুততার সঙ্গে এর যেন কোন পরিচয়ই নাই। অত ধীরে চলে, কিন্তু থামিয়া সময় নষ্ট করে না। রমু ভাবিয়াছিল, এই দুইজনের কাছে একবার সাহস করিয়া ঘেঁষিতে পারিলে অনেক কিছু জানিয়া লওয়া যাইবে। কিন্তু তাহারা ধীরে ধীরে চলিয়া যাইতেছে। এমন ধীরে ধীরে, যেন হাঁটিয়া গিয়া অনায়াসে ইহাদিগকে পিছনে ফেলিয়া রাখা যাইবে—এত ধীরে—কিন্তু কি গম্ভীর সে-চলা। দ্রুত হাঁটার মধ্যে কোথায় সেই গাম্ভীর্য!

 রমু এই বলিয়া নিজের মনকে প্রবোধ দিল, যারা অনেক দূরের অনেক কিছু খবরাখবর বহিয়া বেড়ায়, তারা অধিকক্ষণ থাকে না, এমনি ধীরে ও দৃঢ়তায়, এমনি ধীরে ও নিষ্ঠুরতায় তারা চলিয়া যায়।

 পরের দিন সকালে প্রকাণ্ড একটা করাত কাঁধে লইয়া চারিজন করাতী আসিল। তিতাসের পারে একখণ্ড অকর্ষিত জমির উপর একটা আড়া বাঁধিয়া, পাড়ার লোকজন ডাকিয়া প্রকাণ্ড গাছের গুঁড়িটাকে আড়াআড়িভাবে তাহাতে স্থাপন করিল, তারপর নিচে দুইজন উপরে দুইজন করাতী চান্‌চুন্‌ চান্‌চুন্‌ করিয়া করাত চালাইয়া দিল।

 দুইদিনে সব কাঠ চেরা হইয়া গেলে, তক্তাগুলি পাট করিয়া রাখিয়া পারিশ্রমিক লইয়া করাতীরা বিদায় হইল, আর রমুর বয়সের ছেলেমেয়েরা একগাদা করাতের গুঁড়ায় দাপাদাপি করিয়া খেলায় মাতিয়া গেল।