কথা। খালি হইব না তোমারে কইল কেডায়?’—কাদিরের চোখ ছলছল করিয়া উঠিল। তার জমিলার কথা মনে পড়িয়া বেদনায় বুকটা টন্টন্ করিতে লাগিল, মনে মনে বলিল, মুহুরী যত দোষের দোষী না, তার চাইতে অধিক দোষী করিয়া আমরা এই অসহায় মেয়েটাকে সকলে মিলিয়া জর্জরিত করিতেছি। আমি যত দোষের দোষী না, তার চাইতেও অধিক দোষের দোষী করিয়া তারাও যদি আমার জমিলাকে এমনি জর্জরিত করিতে থাকে, জমিলা কি তখন নিথর পাষাণের মত চুপ করিয়া শোনে আর চেখের জল ফেলে? জমিলা কি তার এতটুকু প্রতিবাদ করে না? করিলে তবু মেয়েটা বাঁচিয়া যাইত মন হালকা করিয়া, কিন্তু না করিলে, সে যখন নিরুপায়ের মত সহিতে হইবে মনে করিয়া তিলে তিলে ক্ষয় হইতে থাকিবে, তখন তাহাকে দুইটা সান্ত্বনার কথা শুনাইবে কে? জমিলা। সে ও মা-মরা মেয়ে। এ যেমন মুহুরীর বুক-সেঁচা ধন, জমিলাও তেমনি কাদিরের বুক-সেঁচা ধন। তবে, বাপ হিসাবে মুহুরীতে আর কাদিরেতে তফাৎ কি? তফাৎ শুধু এই যে, মুহুরী আবার একটা শাদি করিয়াছে। কাদির তার ছেলের দিকে চাহিয়া তাহা করে নাই। আরেকটা শাদি করিয়াও যখন মুহুরী মেয়েটাকে ভুলিতে পারে নাই, তখন কাদির ঘরে একটা গৃহিণী না আনিয়া, ছেলেটার ও মেয়েটার উপর হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা উজাড় করিয়া দিয়া, জমিলাকে কেমন করিয়া ভুলিয়া থাকিবে? কিন্তু তবু ভুলিয়া সে আছে ইহা ঠিক। যদি ভুলিয়া না থাকিত,
পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৫৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৩৪৭