পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
তিতাস একটি নদীর নাম

 করমালীর বউ ধান ভানে না। লোকের বাড়ি-বাড়ি কাঁথা সেলাই করিয়া দেয়। কাঁথা সেলাইয়ের ধুম পড়িয়াছে। তার মোটে অবসর নাই। ডান হাতের সূঁচের ফোঁড় বাঁ হাতের আঙ্গুলের ডগায় তুলিতে তুলিতে আঙ্গুলে হাজার কাটাকুটি দাগ পড়িয়াছে। করমালী প্রায়ই ঘরে গিয়া দেখে বিছানা খালি।

 একটু বিমর্ষ হাসি হাসিয়া করমালী বলিল, ‘বন্দালী ভাই, তুমি ত গিয়া দেখ, বউ ঘুমাইয়া রইছে। আমি ছিঁড়া খাঁথায় গাও এলাইয়া দিয়া পথের পানে চাইয়া থাকি। সে তখন পরের বাড়ির খাঁথা সিলাই করে, আর সে সূঁইচের ফোঁড় আমার বুকে আইয়া বিন্ধে। তার আইতে আইতে রাইত্ গহীন হয়—আগ-আন্ধাইরা রাইত্–দেখি আন্ধাইর গিয়া চাঁদ উঠ্‌ছে—ভাঙা বেড়ার ফাঁকে দিয়া রোশনি ঢুকে, কেডায় যেমুন ফক ফক কইরা হাসে!’

 কথা শেষ হইলেও করমালীর মুখের ম্লান হাসিটুকু মিলাইয়া যায় না। বন্দেআলীর বুক ছাপাইয়া আর একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বাহির হয়। কোনোরকমে সেটা চাপা দিতে দিতে বলে, ‘করমালী ভাই, আছ ভাল। কামে-কাজে থাক, খাও দাও। তার কথা মনে পড়ে না। মনে পড়ে খালি শুইবার সময়। আমার হইছে বিষম জ্বালা! উঠতে বইতে খালি মনে হয় তারে আমি দুখ দিতাছি। একটু সুখ না, শান্তি না—আমরা কি অভাইগ্যা ভাই করমালী?’

 করমালী প্রায় দার্শনিক নির্লিপ্ততার সঙ্গে বলিল, ‘আমার ভাই অত কথায় কথায় শ্বাস পড়ে না! তুমি আমি বড়