পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৩৫৫

চড়িবে, বসিবে, নদী পার হইবে—এক দেশ হইতে আরেক দেশে যাইবে—কত জায়গায় দৌড়াইবে, বখ্‌শিস্ পাইবে—আর এই চারজনার হাতের স্বাক্ষর স্বগর্বে বহন করিতে থাকিবে। কেউ জানিবে না, কারা গড়িয়াছিল, কাদের বিন্দু বিন্দু শ্রম ও বুদ্ধির সঞ্চয় সম্বল করিয়া ধীরে ধীরে সে গড়িয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু নাও? সে কি ভুলিয়া যাইবে এই চার জনকে? কিছুতেই না!

 সেদিন তাদের খুশি উপচাইয়া উঠিল। লোকজন জড় করিয়া চারি জনে মিলিয়া তারা পায়ের পরে পা ফেলিয়া নাচিল এবং সঙ্গে সঙ্গে হাততালি দিয়া গাহিল—শুনরে নগইরা লোক, নাও গড়াইতে কত সুখ॥

 নাও-গড়ানি শেষ করিয়া মিস্ত্রীরা পাওনা গণ্ডা বুঝিয়া লইয়া সত্যি একদিন কাঠের বাক্স মাথায় করিল, হাঁটুর কাপড় টানিয়া টানিয়া খাল পার হইল এবং গোপাটের পথ ধরিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া গেল। অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাহাদিগকে দেখিতে পাওয়া গেল, কিন্তু দেখিতে তারা এক-একটা কাকের মত ছোট হইয়া গেল, তারপর এক সময় আর তাহাদিগকে দেখা গেল না!

 আর একদিন কোথা হইতে তিনজন কারিগর আসিয়া দিনরাত কাজ করিয়া নৌকায় তুলি বুলাইয়া বুলাইয়া রঙ লাগাইয়া গেল। দুই পাশে লতা হইল, পাতা হইল, সাপ হইল, ময়ূর হইল আর একজোড়া করিয়া পালোয়ান হইল।