প্রতি বৎসর চক্রবৃদ্ধি হারে কেবল সুদই যোগাইয়া আসিতেছে, আসল তেমনি অটুট আছে। এখন কোম্পানি উঠিয়া যাইতেছে। আসল আদায় হওয়া দরকার। তাই তারা পেয়াদা-সঙ্গে জবরদস্ত বাবু পাঠাইয়াছে। তার নাম বিধুভূষণ পাল। গ্রামের পালেদের সঙ্গে তার আত্মীয়তা ছিল। তাদের নিকট মালোদের প্রকৃত অবস্থা জানিয়া লইয়া মালোপাড়াতে আসিয়া রুদ্রমূর্তি ধরিল। বুড়াবুড়া মালোদের দাড়ি ধরিয়া টানিয়া জলে নামাইল। চোখ ঘুরাইয়া বলিল, ‘ক’ তোর কাছে কত আছে। শীতকাল। তিতাসের জলে দাঁড়াইয়া ঠক ঠক করিয়া কাঁপিতে কাঁপিতেও তাদের মুখ দিয়া মিথ্যা কথা বাহির হইত না। সর্বত্র মিথ্যা কথা বলিতে পারিলেও তিতাসের জলে নামিয়া মিথ্যা বলা তাদের পক্ষে অসম্ভব ছিল। কেউ বলিত দুই টাকা আছে; কেউ বলিত এক টাকা বার আনা আছে। কেউ বলিত কিছুই নাই। সব ছাঁকিয়া তুলিয়াও তেমন কিছুই আদায় হইল না দেখিয়া শেষে তারা ঘরের থালা ঘটি বাটি, সূতার হাঁড়ি জালের পুঁটুলি বাহির করিয়া নিয়া ঘোড়ার গাড়িতে তুলিয়া চলিয়া যাইত। এর পর পড়িয়া যাইত কান্নাকাটির ধুম। এমন যে গ্রামের সবচেয়ে বুড়া রামকেশব, যার ছেলে পাগল হইয়া মরিয়াছে, যাকে জীর্ণ দেহ টানিয়া টানিয়া প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরায় যাইতে হয়, তাকেও তারা রেহাই দিল না। তার দাড়ি ছিল লম্বা। ধরিবার বেশি সুবিধা হওয়ায় বিধু পাল তাকেই জলে নামাইয়া পাক খাওয়াইয়াছিল সব চাইতে বেশি। কিন্তু সে কাঁদে নাই।
পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৪২১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৪০৯