নিজেরা কাঁদিয়া ও চোখ মুছিয়া মালোরা যখন তাকে সান্ত্বন। দিতে আসিল, সে বলিল, উপরওয়ালা ফেলিয়াছে চৌদ্দ-সান্কির তলায়, কাঁদিয়া কি করিব।
পালেরা বাজারের দোকানি। মালোদের অনেক জিনিসপত্র বাকি দিয়া রাখিয়াছে। তাদেরও আদায় হওয়া দরকার। তাই রোরুদ্যমান মালোদের প্রবোধ দিতে আসিয়া তারা বলিল, বিধু পাল কড়া মেজাজের লোক। কিন্তু লোক ভাল। সব নিয়াছে, কিন্তু তোমাদের নৌকাগুলিতে হাত দেয় নাই।
কিন্তু এ দুঃসময় বেশিদিন থাকে নাই। আবার তিতাস নদীতে মাছ পড়ে। আবার তাদের হাতে পয়সা আসে। হারানো থালা ঘটি বাটি নূতন হইয়া ফিরিয়া আসে। ঘরে ঘরে সূতাকাটার ধুম পড়ে। নূতন নূতন জাল তৈয়ার হয়। সে জালে নানাজাতের মাছ পড়ে। মালোদের মুখে আবার হাসি ফোটে।
কিন্তু বৎসর ঘুরিতে সে হাসিও একদিন মিলাইয়া গেল।
এই পাড়ারই রাধাচরণ মালো কি একটা স্বপ্ন দেখিয়াছে। মালোরা তাহাই আগ্রহভরে শুনিতেছে। শুনিয়া কেউ কেউ বলিতেছে, আরে দূর বোকা, তা কি হইতে পারে। আবার কেউ কেউ শুক্না মুখে বলিল, হইতে ত পারে না। কিন্তু যদি হয়।
রাতে দেখে, রাতে ফুরাইয়া যায়। স্বপ্ন আবার কোনদিন সত্য হয় নাকি?