পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৪৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৪২৫

নৌকা বাঁধিল। অন্য লোকটি ঘাটে দাঁড়াইয়া বলিতেছে, নিতে আসিয়াছ বুঝি? হাঁ। না দেখিলে বুঝি অন্তর দাহনি করে? করে। তা বেশ। বুদ্ধিমানের মতই কাজ করিয়াছ। গাঙে জল থাকিতে থাকিতে নিয়া যাও। সুদিনে গাঙ যতদিন শুক্‌না ছিল, ততদিন তুমি আস নাই। জল শুকাইবার সঙ্গে সঙ্গে তোমার প্রেমও শুকাইয়া গিয়াছিল, কেমন কহিলাম? হাঁ, কথা কিছু মিছা বল নাই। তা শুক্‌না গাঙে তুমি কেমন করিয়াই আসিতে! নৌকা ত আর কাঁধে করিয়া আনিতে পারিতে না? না। তা তুমি যাই কও আর তাই কও, আমি কিন্তু সাঁচা কথাখান কই, ‘যদি থাকে বন্ধুর মন, গাঙ পার হইতে কতক্ষণ?’ মনে থাকিলে গহীন গাঙে কি করিবে। মনে থাকিলে মরগাঙেও আটকাইতে পারে না; গানে আছে না, ‘ভেবে রাধারমণ বলে, পিরিতের নাও শুক্‌নায় চলে।’ কেমন কহিলাম! হাঁ, কথা তুমি কিছু মিছা কও নাই।

 উদয়তারাকে তার স্বামী নিতে আসিয়াছে।


 আজ বনমালীর দিকে সে নূতন করিয়া চাহিল। নূতন এক রূপে তাহাকে দেখিতে পাইল। যতবার চায় তার বুক সমবেদনায় ভরিয়া উঠে। দাদাকে জড়াইয়া ধরিয়া হু হু করিয়া কাঁদিতে চায় সে।

 বনমালী দিন দিন শুকাইয়া যাইতেছে। কিই বা তার বয়স। তবু ইহারই মধ্যে তাহাকে অনেক বুড়া দেখাইতেছে। তার উপর একমাথা চুল একমুখ দাড়ি। কটিতে ছেঁড়া গামছা