হইয়া পড়ে। জয়চন্দ্রর বউ এই দলের। সে যুবতী। কয়েকদিন হয় জয়চন্দ্র মরিয়া গিয়াছে। হাতে যা ছিল পোড়াইতে খরচ হইয়া গিয়াছে। একটি শিশু বুকে দুধ টানে আরেকটা শিশু সারাদিন খাই খাই করে। সে আর কি করিবে। অনেক দূরের গ্রামে গিয়া বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে। ফিরিয়া মাসে সন্ধ্যার পর। ভয় হয় পাছে ধরা পড়ে। কিন্তু ধরা যেদিন পড়িল, সেদিন তার জয় জয়কার! আরও পাঁচজনে তাকেই অনুসরণ করিয়া ভিক্ষায় বাহির হইল। যেন সে একটা পথের সন্ধান দিয়াছে।
কিন্তু সে পথ বড় পিছল! অনেকে চলিতে চলিতে হোঁচট খাইয়া সেই যে পড়িল, মুখ দেখাইবার জন্য আর উঠিল না। মালোপড়া হইতে তারা একেবারে নিশ্চিহ্ন হইয়া গেল।
যারা মরিয়া গিয়াছে তারা রক্ষা পাইয়াছে। যারা বাঁচিয়া আছে তারা শুধু ভাবিতেছে, আর কতদূর। তিতাসের দিক হইতে যেন উত্তর ভাসিয়া আসে, আর বেশি দূর নহে।
বর্ষা আর সত্যি বেশি দূরে নাই। তিতাসে নূতন জল আসিলে উহাদের দগ্ধ হাড় একটু জুড়াইত। কিন্তু মালোরা যেন জলছাড়া হইয়া ধুঁকিতেছে। আর অপেক্ষ করার উপায় নাই। জীবন নদীতে যে ভাঁটা পড়িয়াছিল, তারই শেষ টান উপস্থিত। তিল তিল করিয়া যে প্রাণ ক্ষয় হইতেছিল, তাহা এখন একেবারেই নিঃশেষ হইয়া আসিল।
ঘরে ঘরে বিছানায় পড়িয়া তার ছটফট করিতে লাগিল। পা টিপ্ টিপ্ করিতেছে; চোখ বসিয়া গিয়াছে; গাল ভাঙ্গিয়া