পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৪৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৪৩৫

চোয়াল উঁচু হইয়া উঠিয়াছে। পাঁজড়া বাহির হইয়া পড়িয়াছে। যেন প্রেতের মিছিল। এই দেহ টানিয়া টানিয়াই ঘাটের দিকে যায়। যদি দক্ষিণ হইতে স্রোত আসে, নদীতে যদি মাছ উজায়। কিন্তু আসিলেই বা কি। এই হাতে তারা না পারিবে নৌকা ভাসাইতে না পারিবে জাল ফেলিতে। এমনি শীর্ণ হইয়া গিয়াছে।

 এমনি শীর্ণ হইতে হইতে উদয়তারার স্বামী একদিন বলিল, ‘আর ত খাড়া থাকতে পারি না।’ সে বিছানা লইল।

 তারপর বিছানা লইল বাসন্তীর বাপ-মা দুইজনে। তারা মরিয়া গিয়া বাসন্তীকে মুক্তি দিল। আর মুক্তি দিল মোহনকে তার বাপ। কিন্তু সে এক কাণ্ড করিয়া মরিল।

 ‘আমি কতবার মাথা কুটলাম, গাঁও ছাইড়া যাই। আমার কথা কেউ ‘বস্তুজ্ঞান’ করল না। দেহে ক্ষমতা থাকতে নিজেও গেলাম না। অখন পড়ছি চৌদ্দ-সানকির তলায়।’ এই বলিয়া সে টলিতে টলিতে বারান্দা হইতে উঠানে পড়িয়া গেল। পড়িবার সময় মোহনের দিকে হাত বাড়াইলে, মোহন ধরে নাই। মরিবার সময় মুখটা কি বিকৃত করিয়াছিল। চোখ দুটি খোলা। মরিতেছে না যেন মোহনের দিকে চাহিয়া বিদ্রূপ করিতেছে।

 সুবলার বউ নিজেও আর উঠতে পারে না। পা টিপ্‌টিপ্ করে। মাথা ঘোরে। চোখের সামনে দুনিয়ার রঙ আরেকরকম হইয়া যায়। সে ভাবিয়া রাখিয়াছে, সকলের যা গতি হইয়াছে আমারও তাই হইবে। তার জন্য ভাবিয়া কোন লাভ নাই। কিন্তু ঘরে জল থাকা দরকার। শেষ সময়ে