পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৩৫

 কিন্তু ডহরের অতলস্পর্শী জল জালের খুঁটিতে দীর্ণ-বিদীর্ণ করিয়াও মাছের হদিস মিলিল না। কিশোর পায়ের তলা হইতে বাঁশের গুড়ি ছাড়িয়া দিয়া একটানে বাঁধ খুলিয়া ফেলিল। আচম্‌কা আঘাতে ডহরের নিস্তরঙ্গ জল কাঁপিয়া উঠিল। তারই দিকে চাহিয়া কিশোর বলিল, ‘জান্ বাঁচাইতে চাস্ ত, উত্তরে চল্ সুব্‌লা।’


 একদিন কয়েকখানা নৌকা সাজিল। উত্তরে যাইবে। প্রবাসে। তাদের সঙ্গে কিশোরের নৌকাও সাজিল।

 তারা পুরাণো ছই নূতন করিল, নৌকা ডাঙায় তুলিয়া গাবকালি মাখাইল। জালগুলিকে কড়া গাব খাওয়াইয়া তিনদিন বিশ্রাম দিল। অতিরিক্ত কিছু বাঁশ আর দড়াদড়িও যোগাড় করিল।

 কিশোরের বাপ সঙ্গে গেলে বাড়িতে থাকিবার কেউ থাকে না। বুড়া মানুষ বাড়িতে থাকিয়া সকাল সন্ধ্যা ঘাটে কিনিয়া-বেচিয়া যা পাইবে, সংসার চালাইবে। আরেকজন ভাগীদার দেখা দরকার।

 কিশোরের বাপ ভাবিয়া দেখিল, দুইজনই বালক, কোনোদিন বড় নদী দিয়া বিদেশ যায় নাই। সেখানে গিয়া অনেক কথা বলিতে হইবে। বুদ্ধি বিবেচনা খরচ করিতে হইবে। ডাকাতে ধরিয়া জাল ছিনাইয়া নিতে চাহিলে, সামান্য জাল নিয়া কেবল গরীবকেই মারা হইবে, আর কোনো লাভ হইবে না বলিয়া ডাকাতের মন ভিজাইতে