আজ এই গ্রন্থপ্রকাশের দিনে আমরা আমাদের প্রিয়বন্ধু অদ্বৈত মল্লবর্মণকে বেদনার্ত চিত্তে স্মরণ করি। কাঁচড়াপাড়া যক্ষ্মা হাসপাতালে যাইবার পূর্বে তিনি এই গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি আমাদিগকে দিয়া গিয়াছিলেন। তাঁহার জীবৎকালে ইহা আমরা প্রকাশ করিতে পারি নাই—লেখকের মৃত্যুর পরও কয়েকটি বৎসরই কাটিয়া গেল। আনন্দবাজার পত্রিকার অর্থানুকূল্যে অদ্বৈত স্বাভাবিক ভাবেই রোগমুক্তির পথে অগ্রসর হইতেছিলেন–কিন্তু তাঁহার মৃত্যুর ইতিহাস অন্যরূপ। সে করুণ অধ্যায় আমরা এখানে উদ্ঘাটিত করিতে পারিলাম না।
বাংলাদেশের সাংবাদিক মহলে অদ্বৈতের প্রতিষ্ঠা ছিল—নবশক্তির যুগে প্রেমেন্দ্র মিত্রের সহকর্মীরূপে তাঁহার সাংবাদিক জীবনের আরম্ভ। তারপর আজাদ, মোহাম্মদী, যুগান্তর এবং সর্বশেষে দেশ ও বিশ্বভারতীর সহিত তিনি সংশ্লিষ্ট হইয়াছিলেন। অদ্বৈত যখন নবশক্তির সহসম্পাদকরূপে কার্য আরম্ভ করেন তখন বাংলাদেশে সাংবাদিকের বেতন অধিক ছিল না—প্রকৃতপক্ষে দেশ ও বিশ্বভারতীর সহিত সংশ্লিষ্ট হইবার পূর্ব পর্যন্ত তাঁহার নিদারুণ অর্থকষ্টে কাটিয়াছে।
সাংসারিক মানুষের কাছে এই অর্থকষ্ট অনেকটা স্বেচ্ছানিগ্রহ বলিয়াই মনে হইবে—কারণ অদ্বৈতের পারিবারিক দায় কিছু ছিল না। তিনি নিজে অবিবাহিত ছিলেন, মাতাপিতার মৃত্যুও বাল্য-বয়সেই হইয়াছিল। কিন্তু দূরের আত্মীয়েরাও এই স্বল্প আয়ের বান্ধবটিকে চিনিতে ভুল করেন নাই। আমরা চিরকাল অদ্বৈতকে তাঁহার মুষ্টি-অন্ন বহু জনের সঙ্গে ভাগ করিয়া খাইতে দেখিয়াছি।
এই অর্থকষ্টের অপর কারণ হয়ত বা অদ্বৈতের গ্রন্থপ্রীতি। এই নিদারুণ কৃচ্ছ্রতার মধ্যেও সারাজীবন তিনি গ্রন্থ সংগ্রহ করিয়া গিয়াছেন। অদ্বৈতের মৃত্যুর পর এই বিরাট সংগ্রহভাণ্ডার তাঁহার