সন্ধ্যা হইল ভৈরবের ঘাটে আসিয়া।
এখানে কয়েকঘর মালো থাকে। ঘাটে খুঁটি-বাঁধা কয়েকটি নৌকা, পাড়ে বাঁশের উপর ছড়াইয়া দেওয়া কয়েকটি জাল, এখানে-সেখানে মাটিতে কালো চারকোণা গর্তে গাবের দাগ, পাশে গাবের মট্কি গামলা বেতের ঝুড়ি—দেখিলেই চেনা যায় এখানে মালোরা থাকে।
গ্রামের পাশে সূর্য ঢাকা পড়িলেও আকাশে একটু একটু বেলা আছে। নৌকা বাহিলে আরো একটা বাঁক ঘোরা যাইত কিন্তু সম্মুখে রাত কাটাইবার ভাল জায়গা তিলক স্মরণ করিতে না পারায় কিশোর বলিল, ‘এই জাগাত্ই রাইত্ থ্যাইক্যা যাই রে সুব্লা।’
এখান হইতে বাড়িগুলিও দেখা যায়। গ্রাম আগে বড় ছিল। মালোদের অনেক জায়গা রেলকোম্পানি লইয়া গিয়াছে। বৃহত্তর প্রয়োজনের পায়ে ক্ষুদ্র আয়োজনের প্রয়োজন অগ্রাহ্য হইয়া গিয়াছে। তবু এ গায়ের মালোরা গরীব নয়। বড় নদীতে মাছ ধরে। রেলবাবুদের পাশে থাকে। গাড়িতে করিয়া মাছ চালান দেয়। তারা আছে মন্দ-না।
‘কিশোরদাদা, ভৈরবের মালোরা কি কাণ্ড করে জান নি? তারা জামা-জুতা ভাড়া কইরা রেলকম্পানির বাবুরার বাসার কাছ দিয়া বেড়ায়, আর বাবুরাও মালোপাড়ায় বইআ তামুক টানে আর কয়, পোলাপান ইস্কুলে দেও,—শিক্ষিৎ হও, শিক্ষিৎ হও।’