পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
তিতাস একটি নদীর নাম

কারবারেরও অন্ত নাই। লাভের বাণিজ্যে সকলেই তৎপর, আপন কড়াগণ্ডা বুঝিয়া পাইবার জন্য সকলেই ব্যস্ত। যারা পাইয়াছে তারা আর অপেক্ষা করিতেছে না। আগের যারা অবেলায় পাইয়াছে, তারা রাতটুকু কাটাইয়া কিশোরের নৌকা খোলার সময়েই নৌকা খুলিয়াছে। বেশির ভাগ গিয়াছে—যে দিক হইতে আসিয়াছে সেই দিকে; কিশোরেরা যাইতেছে সামনের দিকে। বন্দরের এলাকা পর্যন্তই কর্মচাঞ্চল্য। এর সীমা অতিক্রম করিতেই দেখা গেল সকল প্রাণস্পন্দন থামিয়া গিয়াছে।

 বন্দরের কলরব ধীরে ধীরে পশ্চাতে মিলাইয়া গেল। সম্মুখে বিরাট নদী তার বিশালতা লইয়া চুপ করিয়া পড়িয়া আছে। শীতের নদী। উত্তরের হাওয়া সরিয়া গিয়াছে। দক্ষিণের বাতাস এখনো বাহির হয় নাই! নদীতে ঢেউ নাই, স্রোতের বেগও নাই। আছে কেবল শান্ত তৃপ্ত স্বচ্ছ অবাধ জলরাশি। এই অনন্তের ধ্যান ভাঙিয়া, এই প্রশান্তের মৌনতা বিঘ্নিত করিয়া কিশোরের নৌকার দুইখানা দাঁড় কেবল ওঠানামা করিতেছে।

 এতক্ষণ কূল ঘেঁষিয়া চলিতেছিল। ঢালা বালিরাশির বন্ধ্যা কূল। লোকের বসতি নাই, গাছপালা নাই, ঘাট নাই। কোনোখানে একটি নৌকার খুঁটিও নাই। এমনি নিষ্করুণ নিরালা কূল। রোদ চড়িলে, শীত অন্তৰ্হিত হইল। সুদূরের ইশারায় এই নির্জনতার মাঝেও কিশোরের মনে যেন আনন্দের ঢেউ উঠিল। নদীর এই অবাধ উদার রূপ দেখিতে দেখিতে