চলিল। শুধু কিশোর নিরাশ হইল না। সুবলের পরিত্যক্ত হালখানা হাতে লইয়া জোরে কয়েকটা টান দিল। হঠাৎ নৌকাটা কিসের উপর ঠেকিল, ঠেকিয়া একেবারে নিশ্চল হইয়া গেল। আতঙ্কিত হইয়া তিলক বলিয়া উঠিল, ‘আর আশা নাই সুব্লা, কুমীরের দল নাও কান্ধে লইছে।’
‘আমার মাথা হইছে। নাও আটকাইছে চরে। বাইর অইয়া দেখ না।’
বাহির হইয়া দেখিয়া তিলক বলিল, ‘ইখানে পাড়া দে।’
রাত পোহাইলে দেখা গেল এখানে নদীর বুকে একটুখানি চর জাগিয়াছে, তারই উপরে লোকে নানা জাতের ফসল বুনিয়াছে। চারাগুলিতে ফুল ধরিয়াছে। মাছিমাকড়েরা ইহারই মধ্যে বাসা করিয়াছে। পাখ্পাখালিরাও খোঁজ পাইয়া সকাল বেলাতেই বসিয়া গিয়াছে। মেলার মতো।
ভোরের রোদে নৌকা খুলিয়া দুপুর নাগাদ অনেক পথ আগাইয়া তারা পূবপার ধরিল। ঘাটে নৌকা বাঁধা, পারে জাল টাঙানো—সেখানেও এক মালো পাড়া।
‘চিন নি তিলক, ইটা কি গাঁও?’
তিলক চিনিতে পারিলনা।
‘ইখানেই নাও রাখ্ সুবলা। দুপুরের ভাত ইখানেই খাইয়া যাই।’
‘হ, খাওয়াইবার লাইগ্যা তারা তৈয়ার হইয়া রইছে।’
‘ভাত খামু নিজে রাইন্ধা, পরের আশা করি নাকি?’