পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
তিতাস একটি নদীর নাম

 ঘাটে সারি সারি নৌকা বাঁধা। তারই একটার পাশে সুবল নৌকা ভিড়াইল।

 একজন নৌকায় বসিয়া ছেঁড়া জাল গড়িতেছিল। কৌতূহলী হইয়া আগন্তুক-নৌকার দিকে তাকাইল। মালোদের নৌকা, দেখিলেই চেনা যায়। ভিড়িতেই, কোন্ গ্রামের নৌকা, কোথায় যাইবে জিজ্ঞাসা করিল।

 তারাও জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল, গ্রামের নাম নয়াকান্দা। ত্রিশ-চল্লিশ ঘর মালো থাকে। নয়া বসতি করিয়াছে। আগে ছিল পশ্চিম পারের এক শিক্ষিত লোকের গ্রামে। নদীর পারে যেখানে তারা নৌকা বাঁধিত জাল ছড়াইত, জমিদার সে-জমি তাদের নিকট হইতে জোর করিয়া ছিনাইয়া অন্য জাতের কাছে বন্দোবস্ত দিয়াছে। তাই তারা সেই অবিচারের গ্রাম ছাড়িয়া এখানে আসিয়া নূতন বাড়ি বাঁধিয়াছে। এখানে জমিদার নাই। বেশ শান্তিতে আছে। হাটবাজার দূরে। কিন্তু ঘাটে নৌকা আছে, দেহে ক্ষমতা আছে। তার দূরকে সহজেই নিকট করিতে পারে।

 কিশোর মুগ্ধ হইয়া শুনিতে শুনিতে হাতের হুকা তার দিকে বাড়াইয়া দিল।

 ‘আমার হুক্কাও আইতাছে। দেও আগে তোমারটাই খাই।’

 এই সময়ে একটি ছোট দিগম্বরী হৃষ্টপুষ্ট মেয়ে আসিতেছে দেখা গেল। বাড়ি থেকে হুকা লইয়া আসিয়াছে। শরীরের দুলানির সঙ্গে সঙ্গে হুকাটা ডাইনে-বাঁয়ে দুলিতেছে। নৌকাব কাছে আসিয়া ডাকিল, ‘বাবু, আমারে তোল্।’