পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
তিতাস একটি নদীর নাম

দেহেরই মধ্যে। তবেই দেখ—তান্‌রা এই দেহের মধ্যেই বিরাজ করে। তারপর নদীয়া নগরের প্রভু গৌরাঙ্গ-অবতারের কথাখান ভাব না কেনে। পদকর্তা কইছেঃ আছে মানুষ গ সই, আছে মানুষ গওরচান্দের ঘরে, নিগুঢ় বৃন্দাবনে গ সই, আছে মানুষ॥ এক মানুষ বৈকুণ্ঠবাসী, আরেক মানুষ কালোশশী, আরেক মানুষ গ’ সই, দেহের মাইঝে রসের কেলি করে —নিগুঢ় বৃন্দাবনে গ সই আছে মানুষ॥’

 কথাগুলির অর্থ তিলক কিছু কিছু বুঝিল। কিশোর ও সুবল মুগ্ধ আনুগত্যের দৃষ্টি দিয়া বক্তার কথাগুলি উত্তমরূপে শুনিয়া লইয়া মনে মনে বলিল, এসব তত্ত্বকথা, অত্যন্ত শক্ত জিনিস। যে বুঝে সেই স্বর্গে যায়। আমি তুমি পাপী মানুষ। আমরা কি বুঝিব!

 অনেক রাত পর্যন্ত গান হইল। সাধু নিজে গাহিল। পাড়ার আরো দু’চারজন গাহিল। তিলকও তাহার জানা ‘উঠান-মাটি ঠন্‌ঠন পিড়া নিল সোতে, গঙ্গা মইল জল-তিরাসে ব্রহ্মা মইল শীতে’, গানটি গাহিল। সাধুর নির্বন্ধাতিশয্যে কিশোর আর সুবল দুইজনে তাহদের গাঁয়ের সাধুর বৈঠকে শোনা দুই-তিনটা গান গাহিয়া সাধুর চোখে জল আনিল।

 তাদের গান শুনিয়া সাধু মুগ্ধ হইল। ততোধিক মুগ্ধ হইল তাদের সরল সাহচর্যে। মনে মনে বলিলঃ বৃন্দাবনের চির কিশোর তোমরা, কৃষ্ণে তোমাদের গোলকের আনন্দ দান করুক। আমাকে যেমন তোমরা আনন্দ দিলে তোমরাও তেমনি আনন্দময় হও।