পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৶৹

ক্যাপ্‌টেন নরেন্দ্র দত্ত তাঁহাকে কলিকাতা লইয়া আসেন। বিভিন্ন পত্রিকায় অদ্বৈতের লেখাগুলি বিক্ষিপ্ত হইয়া আছে। অনেক পত্রিকার সে সকল সংখ্যা এখন হয়ত পাওয়াও যাইবে না—তাঁহার দুই একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসও কোন কোন পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় মুদ্রিত হইয়াছিল। কিন্তু অদ্বৈতের সমগ্র সাহিত্য-সাধনার মধ্যে এই গ্রন্থটিই তাঁহার সর্বোৎকৃষ্ট কীর্তি। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ প্রথমত মাসিক মোহাম্মদীতে প্রকাশিত হইতেছিল—গ্রন্থটির কয়েকটি স্তবক মুদ্রিত হইবার সঙ্গে সঙ্গে তাহা রসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এমন সময় এই গ্রন্থের পাণ্ডুলিপিটি রাস্তায় হারাইয়া যায়। বলাবাহুল্য অদ্বৈতের জীবনে এই ঘটনাটি সর্বাপেক্ষা মর্মান্তিক।

 বন্ধুবান্ধব এবং পাঠকদের আগ্রহাতিশয্যে লেখক আবার ভগ্নহৃদয়ে তিতাসের কাহিনী লইয়া বসিলেন। তখন অদ্বৈতের দায়িত্ব না হইলেও দায় বাড়িয়াছে—তিতাস পারের অনেক মালোপরিবার উদ্বাস্তু হইয়া পশ্চিমবঙ্গে আসিয়াছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে অদ্বৈত কলিকাতার বাহিরে গিয়া তাহাদের দেখিয়া আসেন—তাহাদের যৎসামান্য সুবিধার জন্য দেশের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বভারতীতে কাজ জুটাইয়া লন, আর দুই কাজের পারিশ্রমিক হইতে নিজের শাকান্নমাত্রের বন্দোবস্ত রাখিয়া বাকি সব তাহাদের মধ্যে বিলাইয়া দেন। সারাদিন চাকুরী ও অর্থার্জনের জন্য আরো নানা লেখা লেখিয়া দিনমানে একটুও সময় পান না। দিনের সকল কাজ সারিয়া সন্ধ্যায় নগরীর পূর্ব উপান্তে তাঁহার ষষ্ঠীতলার বাসাটুকুতে ফিরিয়া যান। ঐ বাড়িতে অধিকাংশই রেলের শ্রমিক, ঘরে-বারান্দায় ঠাসাঠাসি করিয়া তাহাদের খণ্ড খণ্ড সংসার; কিন্তু অপরিচ্ছন্ন অন্ধকার সিঁড়ি বাহিয়া চারতলার ছাতের ঘরটিতে পৌঁছিলে দেখা যায় আকাশ সীমাহীন—অদ্বৈত ক্লান্ত দেহ টানিয়া লইয়া রাত্রিতে তিতাসের কাহিনী লিখিতে বসিতেন, ক্রমে নগরীর