চোখ যায় কেবল ধানগাছ। ভোরের বাতাসে তাদের শিশুশিরগুলি দুলিতেছে, তাতে একটানা একটা শব্দ হইতেছে। আকাশ বাতাস ঢেউ সব কিছুর প্রাতঃকালীন কোমলতার সহিত তাল রাখিয়া এ শব্দের সুরও ক্রমাগত কোমলে বাজিয়া চলিয়াছে। কিশোরের চোখ জুড়াইয়া গেল। মোড়লের গ্রামের লোকেরা এ সকল ধানের জমি লাগাইয়াছে। ধান হইলে ইহারাই সব কাটিয়া নিয়া ঘরে তুলিবে। বাত্যা-বাদলায় নদীতে নামিতে না পারিলেও কিশোরের দেশের মালোদের মত ইহাদের উপবাস করিতে হইবে না।
‘বাঁশটা আস্তে চালাইও তিলক। ধানগাছ নষ্ট না হয়। কার জানি এই ক্ষেত। মনে কষ্ট পাইব।’
‘তোমার যত কথা। কত রাখালে পাঁজনের বাড়ি দিয়া ক্ষেত নষ্ট করে, কত গাই-গরু চোরা-কামড় দিয়া ধানগাছের মাথা ভাঙে, আম্রারে চিন্ব কোন্—’
তিলকের অর্বাচীনতায় কিশোর চটিয়া উঠিত। কিন্তু এই স্নিগ্ধ সকালবেলার সহিত চটিয়া ওঠা বড় বেমানান। কিশোরের মনের গোপনতায় যে সূক্ষ্ম শিল্পবোধ সব সময় প্রচ্ছন্ন থাকে, তারই ইঙ্গিত এবার তাকে চটিতে দিল না। সে আগেই তীরে নামিয়াছিল। তিলকের ছুঁড়িয়া-ফেলা বাঁশের আগাটা ক্ষিপ্রগতিতে ধরিয়া তার গতিরোধ করিল এবং তার উদ্যত আঘাত হইতে অবোলা ধানগাছগুলিকে বাঁচাইল।
জাল লাগানো শেষ হইলে কিশোর নৌকায় উঠিয়া বাঁশের গোড়ায় পা দিল। সুবল পাছার কোরায় হাত দিলে গলুইয়ে