রসাল প্রসঙ্গ পাইয়া তিলক মনে মনে উল্লসিত হইয়া উঠিয়াছিল। ভাবিয়াছিল রাধার দল কৃষ্ণপক্ষকে কড়া একটা উত্তর দিয়া আরও চেতাইবে, তারপর কৃষ্ণপক্ষের মুখ দিয়া যাহা বাহির হইবে, তাহার সঙ্গে সঙ্গে সে নাচিতে উঠিবে। তার আশাভঙ্গ হইল।
দোল-মণ্ডলের চারিদিকে খলার ও শুকদেবপুরের মেয়েরা সেদিন একাকার হইয়া গিয়াছে। কারো হাতে একজোড়া রাম-করতাল। কারো বা শুধু-হাত।
একসঙ্গে অনেকগুলি করতাল বাজিয়া উঠিল। ঝা ঝা ঝম্ ঝম্ ঝা ঝা ঝম্ ঝম্ শব্দে আকাশ ফাটাইয়া দিল। তার সঙ্গে অনেকগুলি কাঁকনপরা হাতের মিলিত করতালি। তারপর অনেকগুলি মেয়ের পা একসঙ্গে নাচিয়া উঠিল। অনেকগুলি মেয়ের কণ্ঠ একসুরে গাহিয়া উঠিল। কিশোরের মন এক অজানা আনন্দ-সাগরে ডুবিয়া গেল।
দলের ভিতরে সেই মেয়েটিকেও দেখা গেল। মার পায়ের দিকে তাকাইয়া সেও তালে তালে পা ফেলিতেছিল। কিশোরের সহিত চোখাচোখি হইয়া সে তাল-কাটা পড়িল। পা আর উঠিতে চাহিল না। মা সস্নেহে মুখ ঘুরাইয়া চাহিয়া দেখে, মণ্ডলের মধ্যে থাকিয়া মেয়ের পা দুটি স্তব্ধ হইয়া গিয়াছে। আর ঘনঘন লাজে রাঙা হইয়া উঠিতেছে। কারণ কি, না, অদূরে দাঁড়াইয়া কিশোর তাহাকেই দুই চোখের দৃষ্টি দিয়া যেন গ্রাস করিতেছে।