পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫২
তিন সঙ্গী

আরো অনেক শুনব আর বুঝব না।”

 অচিরার দুই চোখ কৌতুকে স্নেহে জ্বলজ্বল ছলছল করে উঠল। ইচ্ছে করছিল, স্নিগ্ধ কণ্ঠের এই আলাপ শীঘ্র যেন শেষ হয়ে না যায়। দিনের আলো ম্লান হয়ে এল। সন্ধ্যার প্রথম তারা জ্বলে উঠেছে শালবনের মাথার উপরে। সাঁওতাল মেয়েরা জ্বালানি-কাঠ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে ঘরে, দূর থেকে শোনা যাচ্ছে তাদের গান।

 এমন সময় বাইরে থেকে ডাক এল, “দিদি, কোথায় তুমি? অন্ধকার হয়ে এল যে। আজকাল সময় ভালো নয়।”

 “ভালো তো নয়ই দাদু, তাই একজন রক্ষাকর্তা নিযুক্ত করেছি।”

 অধ্যাপক আসতেই তাঁর পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করলুম। তিনি শশব্যস্ত হয়ে উঠলেন। পরিচয় দিলুম, “আমার নাম নবীনমাধব সেনগুপ্ত।”

 বৃদ্ধের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, বললেন, “বলেন কী, আপনিই ডাক্তার সেনগুপ্ত? আপনি তো ছেলেমানুষ।”

 আমি বললুম, “নিতান্ত ছেলেমানুষ। আমার বয়স ছত্রিশের বেশি নয়।”

 আবার অচিরার সেই কলমধুর কণ্ঠের হাসি, আমার মনে যেন দুনো লয়ের ঝংকারে সেতার বাজিয়ে দিলে। বললে, “দাদুর কাছে পৃথিবীর সবাই ছেলেমানুষ, আর দাহ হচ্ছেন সকল ছেলেমানুষের আগরওয়ালা।”

 অধ্যাপক বললেন, “আগরওয়ালা? একটা নতুন শব্দ বাংলায় আমদানি করলে। কোথা থেকে জোটালে।”

 “সেই যে তোমার ভালোবাসার মাড়োয়ারি ছাত্র, কুন্দনলাল আগরওয়ালা; আমাকে এনে দিত বোতলে করে আমের চাটনি; আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলুম, আগরওয়ালা কথাটার মানে কী। সে বলেছিল, পায়োনিয়র।”

 অধ্যাপক বললেন, “ডাক্তার সেনগুপ্ত, আপনার সঙ্গে আলাপ