পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৮
তিন সঙ্গী

বললেন, ‘বাবা এবার বিয়ে করতে হবে, আমার আর কদিন-বা সময় আছে।’ আপনি বললেন, ‘আমার জীবন আর আমার সায়ান্স এক, সে আমি দেশকে উৎসর্গ করব। আমি কোনোদিন বিয়ে করব না।’ হতাশ হয়ে আবার তিনি চোখের জল মুছে বসে আছেন। আপনার ছত্রিশ বছর বয়সের গণিতফল গণনা করতে আমার গণনায় ভুল হয়েছে কি না বলুন, সত্যি করে বলুন।”

 এ মেয়ের সঙ্গে অনবধানে কথা কওয়া বিপদজনক। কিছুদিন আগেই একটা ব্যাপার ঘটেছিল। প্রসঙ্গক্রমে অচিরা আমাকে বলেছিল, “আমাদের দেশে মেয়েদের আপনারা পান সংসারের সঙ্গিনীরূপে। সংসারে যাদের দরকার নেই, এদেশের মেয়েরাও তাদের কাছে অনাবশ্যক। কিন্তু বিলেতে যারা বিজ্ঞানের তপস্বী, তাদের তো উপযুক্ত তপস্বিনী জোটে, যেমন ছিল অধ্যাপক কুরির সহধর্মিণী মাডাম কুরি। সেরকম কোনো মেয়ে আপনি সে দেশে থাকতে পান নি?” মনে পড়ে গেল ক্যাথারিনের কথা। একসঙ্গে কাজ করেছি লণ্ডনে থাকতে। এমন-কি, আমার একটা রিসর্চের বইয়ে আমার নামের সঙ্গে তাঁর নামও জড়িত ছিল। মানতে হল কথাটা। অচিরা বললে, “তাঁকে আপনি বিয়ে করলেন না কেন। তিনি কি রাজী ছিলেন না।”

 আবার মানতে হল, “হাঁ, প্রস্তাব তাঁর দিক থেকেই উঠেছিল।”

 “তবে?”

 “আমার কাজ যে ভারতবর্ষের। শুধু সে তো বিজ্ঞানের নয়।”

 “অর্থাৎ ভালোবাসার সফলতা আপনার মতো সাধকের কামনার জিনিস নয়। মেয়েদের জীবনের চরম লক্ষ্য ব্যক্তিগত, আপনাদের নৈর্ব্যক্তিক।”

 এর জবাবটা হঠাৎ মুখে এল না। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে অচিরা বললে, “বাংলা সাহিত্য আপনি বোধ হয় পড়েন না। কচ ও দেবযানী বলে একটা কবিতা আছে। তাতে ঐ কথাই