পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণান্ধুর . ܒ ܘ ܠ এক দাড়িয়ে থাকার সে অনুভূতির फूलना श्न न। ኳኳ তার প্রকাশের ভাষাও নেই—যা খুব ঘনিষ্ঠ, খুব আপন, তাকে কি আর প্রকাশ করা যায় ? আজ বিকেলে বহুদিন পরে ভারী সুন্দর রাঙা রোদ উঠল। বঁধালের কাছে নাইতে নেমে মােঝ জলে গিয়ে ওপারের একটা সাইবাবলা গাছের ওপর রোদের খেলা দেখছিলাম-কি অদ্ভুত ধরণের ইন্দ্ৰনীল রং-এর আকাশ, আর কি অপূর্ব সোনার রং রোদের। - সকলের চেয়ে সেই সাইবাবলা গাছের বঁাকা ডালাপালা ও ক্ষুদে ক্ষুদে সবুজ পাতার ওপর সোনার রংয়ের রোদের খেলা ।--তারই পাশে ওপারের কদম্বগাছটাতে বড় বড় কুঁড়ি দেখা দিয়েচে-শ্রাবণের প্রথমেই ফুল্লাপুষ্পসম্ভারে নতশােখনীপতরুটী বর্ষাদিনের প্রতীক স্বরূপ ওই সবুজ উলুখড়ের মাঠে স্বমহিমায় বিরাজ করবে-বর্ষার ঢল নেমে ইছামতী বেড়ে ওর মূল পৰ্য্যন্ত উঠবে, ঝরা কেশররাজি ঘোলাজলের খরস্রোতে ভেসে চলে যাবে- উলুবন আরও বাড়বে।--আমি তখন থাকবো কলকাতায়, সে দৃশ্য দেখতে আসবো না। কাল সকালে এখান থেকে যাবে, আজই এখানে থাকার শেষ দিন এ বছরের মত। এবার ছুটিটা কাটুল বেশ-কি প্ৰকৃতির দিক থেকে, কি মানুষের দিক থেকে, অদ্ভুত ভাবে ছুটীটা উপভোগ করা গেল এবার। কলকাতায় থাকলে আমার যে আফ্রিকা দেখবার ইচ্ছে হয়, পাহাড় জঙ্গল দেখবার ইচ্ছে হয়—এখানে দীর্ঘদিন কাটালে কিন্তু আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না । গাছপালায়, নীল আকাশে, নদীর কালোজিলে সাতার দিতে দিতে দুপাশের বঁাশবন, সাইবাবলার সারি চেয়ে চেয়ে দেখা, সবুজ উলুর মাঠের দৃশ্য, পাখীর অবিশ্রান্ত ডাক—এখানে মনের সব ক্ষুধা মিটিয়ে দেয়। বসে লিখচি, রাণু এসে বল্লে—দাদা এক কাপ চা খাবেন কি ? সে ওদের রান্না ঘর থেকে চা নিয়ে এসেচে বয়ে । আর কাল থেকে অনবরত বলচে-দাদা চলে যাবেন না। কাল, আর একদিন থাকুন, আপনি চলে গেলে পাড়া আঁধার হয়ে যাবে। কাল সমস্ত দিনের মধ্যে অন্ততঃ তিন চার বার একথা বলেচে-অথচ ওর ওপর কি অবিচার করেচি এবার-ওকে নিয়ে তাস খেলিনি একটী দিনও-ও খেলতে চাইলেও খেলিনি। ভাল করে কথাও বলিনি।