পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S S SR তৃণান্ধুর কাল বিকেলে কুঠার মাঠে বেড়াতে গিয়ে পাটলিবর্ণের মেঘস্তুপের দিকে চোখ রেখে একটা জলার ধারে বসলাম-গাছপালার কি রূপ! সেই যে গন্ধটা এই সময় ছাড়া অন্য সময় পাওয়া যায় না-সেই গন্ধ দিন রাত সকাল সন্ধ্যা আমাকে যেন অভিভূত করে রেখেচে । আজি ক’দিন বর্ষা পড়েচে—বসে বসে আর কোনো কাজ নেই, খুকুদের সঙ্গে গল্প করচি, কাল সারাদিনই এইভাবে কেটেচে, তবুও কাল নদীতে এপাড়ার ঘাট থেকে ওপাড়ার ঘাটে সাতার দিলাম, একটু ব্যায়ামের জন্যে। আজ সকালে নদীর ঘাটে ভোরবেলা গিয়ে মেঘমেদুর আকাশের শোভায় আনন্দ পেলাম। এই শিমূল গাছগুলো আমাদের এদেশের নদীচরের প্রধান সম্পদ ! এগুলো আর সাই বাবলা না থাকলে ইচ্ছামতীর তটশোভা অনেক পরিমাণে ক্ষুন্ন হোত । আজ সকালে নদীর ঘাটে গিয়ে চারিদিকের আকাশে চেয়ে চেয়ে দেখলাম। মেঘ অনেকটা কেটেছে-আকাশের নীচে একটু একটু আলো দেখা যাচ্চেবোধহয় ওবেলা আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। মনটা তপ্ত নিৰ্ম্মল আকাশ ও প্রচুর সূৰ্য্যালোকের জন্যে হঁপাচে-কাকাদের শিউলি গাছটার দিকে চেয়ে দেখচি গাছপালার স্বাভাবিক প্ৰভাতী রং ফিরে এসেচে-সে ঘসা কাচের মত রং নেই আকাশের।--কিন্তু একটু পরেই ঘন মেঘে সব ঢেকে দিলে। আমি আবিষ্কার করেচি আমাদের দেশের প্রথম হেমন্তের সেই অপূর্ব সুগন্ধটা প্ৰস্ফুটিত মৰ্বচে-লতার ফুলের গন্ধ। হঠাৎ কাল বিকেলে আমি এটা আবিষ্কার করেচি। কুঠার মাঠে আজ স্নানের পূর্বে বেড়াতে গিয়ে বনে বনে খানিকটা বেড়ালাম, লক্ষ্য করে দেখলাম। এই সময়ে কত কি বনের লতাপাতায় ফুল ফোটে। মরুচে-লতা তো পুষ্পিত হয়েছেই, তা ছাড়া মাখম-সিমের গোলাপী ফুলের দল ঘনসবুজ পাতার আড়ালে দেখা যাচ্চে, কেরোঝাকার লতায় ক্ষুদে ক্ষুদে ফুল ফুটেচে, ফুল বলে মনে হয় না, মনে হয় যেন হলদে। পুষ্পরেণু-কি ভুরিভুরে মিষ্টি গন্ধ, ডালের গায়ে পৰ্যন্ত ফুল ফুটেচে। ছাতিম ফুলের এই সময়, কুঠার মাঠের জঙ্গলে একটা নবীন সপ্তপর্ণ তরুর দেখা মিলল, কিন্তু ফুল হয়নি তাতে। মেটে আলু তুলবার বড় বড় গৰ্ত্ত বনের মধ্যে, এক জায়গায় একটা খুব বড় কেরোঝাকার ঝোপকে কেটে ফেলেচে দেখে