পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণান্ধুর 8S বইখানি খুব ভাল করে পড়েচোন। দুর্গার সিন্দুর কৌটা চুরি ও সেটা কলসী থেকে বেরুনোর উল্লেখটা বার বার কল্লেন । সোমনাথ বাবু আমাকে এসে পার্ক সার্কাসে ট্রামে উঠিয়ে দিয়ে চলে গেলেন-বল্লেন, আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে একটা ভারী লাভ হল বলে মনে করাচি । ওখান থেকে এসে গেলাম। রেবতী বাবুদের মেসো-খানিকটা গল্পগুজব করার পরে গেলাম নন্দরাম সেনের গলি ও বাগবাজারে । তারপর হরি ঘোষের ষ্ট্রীটে কালোদের বাসাতে। দুপুর তখন দুটো, বাইরের ঘরে বুড়ো ছিল, মিনুও এখানে আছে দেখলাম-মিনু কাছে এসে বসলো, অনেক গল্পগুজব কল্পে। কালোর ছেলে এনে দেখালে। ঠিক যেন মায়ের পেটের বোনের মত সরল ব্যবহার কল্পের্ব। ভারী আনন্দ হোলো দেখে। ওরা সবাই এল--সরবৎ করে আনলে মিনু-ভারী ভাল লাগলো । ওখান থেকে তিনটের সময় বেরিয়ে দক্ষিণ বাবুর বাড়ী, সেখানে অনেকক্ষণ গল্পগুজবের পর জলযোগ হোল । চা-পানের পর সেখান থেকে বার হয়ে নিকটেই মহিম হালদার স্ত্রীটে রবি-বাসরের অধিবেশনে যোগ দিলাম-সেখানে বেলা পাচটা থেকে রাত ন’টা । অনেক রাত্রে ট্রামে বাসায় ফিরলাম । আজকাল সেই মধুর দিনগুলি হারিয়ে গেছে—বহুদিন দেশে যাইনিআজও বিকেলে স্কুলবাড়ীর ছাদ থেকে বহুদূরের দিকে চেয়ে কতকাল আগের কথা মনে হচ্ছিল-মনে হচ্ছিল অনেককাল আগের সেই মাকাল ফল, পটুপটি গাছের সময়টা এই—কত নতুন লতাপাতা গজিয়েচে-ভাদ্র দুপুরের খররৌদ্রে জানালার ধারে বসে সে সব মধুর জীবন যাত্রার দিনগুলি-কত সুখদুঃখ ভরা শৈশবের সে জগতটা ৷-“কোথায় কতদূরে যে চলে গিয়েচে ! আজিকাল সময় পাই না, স্কুলের পরই পর পর দুটাে ছেলে পড়ানো- একটুখানি ভাববার সময় পাইনে-দেখবার সময় পাইনে, তবু যতটুকু সময় পাই দুর্ভিক্ষের ক্ষুধায় হা করে যেন আকাশটার দিকে চেয়ে। একটুখানি অপরাহকে স্কুলের তেতলার ছাদটা থেকে দেখি - আবার সেই জীবন-সন্ধ্যা ও মাধবী-কঙ্কনের দিনগুলি আগত প্ৰায়। এখন দেশে পাটের আটি কাচবে, খুব পাকাঠা পড়ে থাকবে। সেই জেলেক, রংমহল শিস মহাল, শিবাজীর দিনগুলি আরম্ভ হবে। এই যে অভাব, না দেখতে পাওয়া,-আমার মনে হয় এই ভালো। এতে মনের তেজ খুব বাড়ে, দৃষ্টির intensity আরও বেশি হয় এটা বেশ বুঝি।