পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এক মাস পরে আজ আবার কলকাতায় ফিরোচি। এই এক মাস দেশে কাটিয়েচি অনেক কাল পরে। মা মারা যাওয়ার পরে আর এত দীর্ঘদিন একসঙ্গে দেশে কখনো থাকিনি। এই এক মাস আমার জীবনের এক অপূর্ব আনন্দের অধ্যায়। Dean Inge যাকে ঠিক Joy of Life বলেচেন, তা আমি এই গত মাসটীতে প্ৰাণে প্ৰাণে অনুভব করেচি। সেরকম নিভৃত, শান্ত, শ্যামল মাঠ ও কালো জল নদীতীর না হোলে মনের আধ্যাত্মিক পুষ্টি কেমন করে হবে ? শহরের কৰ্ম্মকোলাহলে ও লোকের ভিড়ে তার সন্ধান কোথায় মিলবে ? তাই যখন জটাখালির ভাঙ্গা কাঠের পুলটাতে দুধারের মজ গাঙ ও বাওড় এবং মাথার উপর অনন্ত নীলিমা, নীচে ঘনসবুজ গাছপালা, ধানক্ষেত, বিল, গ্রামসীমার বঁাশবন, মাটীর পথের ধারে পুষ্পভারনত বাবলা গাছের সারি, দূরের বটের ডালে বৌ-কথা-ক’ পাখীর ডাক-এসবের মধ্যে প্ৰতি বৈকালে গিয়ে বসতাম, তখন মনে হোত আর শহরে ফিরে যাবার আবশ্যক নেই। জীবনের সার্থকতা অর্থ উপাৰ্জনে নয়, খ্যাতি প্ৰতিপত্তিতে নয়, লোকের মুখের সাধুবাদে নয়, ভোগে নয়সে সার্থকতা শুধু আছে জীবনকে গভীর ভাবে উপলুব্ধি করার ভেতরে, বিশ্বের রহস্যকে বুঝতে চেষ্টা করবার আনন্দের মধ্যে, এই সব শান্ত সন্ধ্যায় বসে এই অসীম সৌন্দৰ্য্যকে উপভোগ করায়। সেকথা বুঝেছিলাম সেদিন তাই সন্ধ্যার কিছু আগে জীবনের এই অনন্ত গতি-পথের কথা ভাবতে ভাবতে অপূৰ্ব জীবনের আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলাম। সন্ধ্যার অন্ধকার গ্রাহ না করেই কুঠার মাঠের অন্ধকার-ঘন, নিৰ্জন ও শ্বাপদসংস্কুল পথটা দিয়ে এক বাড়ী ফিরলাম। আর নদীর ধারে বসে অপূৰ্ব আকাশের রং লক্ষ্য এরে তার পরদিনও ঠিক সেই মনের ভাব আবার অনুভব করেছিলাম। এরকম এক একটা সময় আসে যখন বিদ্যুৎচমকে অনেকখানি *কার রাস্তা একেবারে দেখতে পাওয়ার মত সারা জীবনের উদ্দেশ্য ও রতা যেন এক মুহূৰ্ত্তে জানতে পারা যায়, বুঝতে পারা যায়। শুধু *৮:১১, ধৰ্য্যই এই বিদ্যুৎ-আলোর কাজ করে মানসিক জীবনে। কিন্তু এই