পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

br8 তৃণান্ধুর বসে রইলাম। সামনে চাদ উঠেচে নক্ষত্র জলচে। অনেকক্ষণ পরে ওরা এল। বল্লে ষ্টেশনের কাছে একটা হায়েনা মেরেচে। আমি একটা শালপাতার পিকা আনিয়ে খেলাম । সারারাত্রি আমরা গল্প করে জাগলাম। শেষ রাত্রে আমি কয়েকবার উঠে এসে এসে বাইরে দাঁড়ালাম-চাদ দূরে পাহাড়ের মাথায় অন্ত গেল। রাঙা হয়ে গেল চাদটী-অদ্ভুত দেখতে হোয়েচে !... অনেক রাত্রে আমরা ষ্টেশনে এলাম। বেজায় শীত । ভোরবেলার দিকে ট্রেণটা এল । রাতে কি কষ্ট-মালের বস্তার ওপর বসে বসে ঢুলছিলাম-পরিমল বাবুকে জায়গাটা ছেড়ে দিলাম। ভোর হােল কুলুঙ্গা ষ্টেশনে। কি অপূর্ব পর্বতের ও জঙ্গলের দৃশ্য। q, Wilderness aff খুব কমই দেখেচি । যে ষ্টেশনে আসি-সেইটাই মনে হয় আগেকার চেয়ে ভাল। নোটবুকে বসে বসে নোটু করি, কি কি সেখানে আছে। গোইলকেরা ষ্টেশনটী বড় সুন্দর লাগল। শাল জঙ্গল, পাহাড়, স্থানটাও অতি নির্জন। বাংলাদেশের কাছে যত আসি ততই সমতল প্ৰান্তর বেশী। খড়গপুরের ওদিকে কলাইকুণ্ড জায়গাটী এ হিসাবে বেশ ভাল। ংলাদেশে গাড়ী ঢুকল। তখন বেলা একেবারে চলে গেছে। এ আর এক রূপ, অতি কমনীয়, শান্ত শ্যামল । চোখ জুড়িয়ে যায়, মন শান্ত হয় কিন্তু এর মধ্যে বিরাটত্ব নেই, majesty নেই-হৃদয় মন বিশ্বফারিত হয় না, কল্পনা উদাম হয়ে উঠে অসীমতার দিকে ছুটে চলে না। এতে মনে তৃপ্তি আসে-ছোটখাটো ঘরোয়া সুখ দুঃখের কথা ভাবায়, নানা পুরাণে স্মৃতি জাগিয়ে তোলে-মানুষ যা নিয়ে ঘরকন্না কৰ্ত্তে চায় তার সব উপকরণ জোগায়। হাসি অশ্রু মাখানো লজ্জানতা পল্লীবধুটী যেন—তার সবই মিষ্টি, কমনীয়। কিন্তু মানুষের মন এ ছাড়া আরও কিছু চায়, আরও উদাম, অশান্ত, রুক্ষ, রুদ্র ভাব চায়। বাংলাদেশে তা যেন ঠিক মেলে না। হিমালয়ের কথা বাদ দি-সেটা বাংলার নিজস্ব একচেটে জিনিস নয়-আর তার সঙ্গে সত্যিকার বাংলার সম্বন্ধই বা কি ? পদ্মা ?--সেও অপূর্ব, সন্দেহ নেই-কিন্তু সে আদরে পালিত ধনীবধু, একগুয়ে, তেজস্বিনী, শক্তিশালিনী, যা খুশি করে, কেউ আটকাতে পারে না-সবাই ভয় করে চলেখামখেয়ালী-রূপবতী-তবে মিষ্টি নয়-high-bred রুপ ও চালচলন। ঘরকন্ন পাতিয়ে নিয়ে থাকবার পক্ষে তত উপযোগী নয়।