পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মারিয়াছে। সেই চাপড়ে কর্ত্তা হয়তো মরিয়াছেন।

 “কর্ত্তা মরিয়া গিয়াছেন,”— এইরূপ অকল্যাণের কথা শুনিয়া ছোটরাণী ফোঁস করিয়া উঠিলেন! তিনি বলিলেন— “তোমার যতবড় মুখ, ততবড় কথা! আসুন কর্ত্তা! তাঁরে বলি, 'তুমি মরিয়া গেলে, তোমার বড়রাণীর হাড়ে বাতাস লাগে।' তোমার মুখে চূণ-কালি গিয়া, তোমার মাথা মুড়াইয়া, তোমার মাথায় ঘোল ঢালিয়া, তোমাকে এখনি বিদায় করিবেন।”


চতুৰ্দশ পরিচ্ছেদ

মশা প্রভু

তিন সতীনে পুনরায় ঘোরতর বিবাদ বাধিল। রক্তবতী চীৎকার করিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। মশার ঘরে কোলাহলের রোল উঠিল। এমন সময় মশা বাড়ী আসিলেন। ঘরে কলহ-কচকচির কোলাহল শুনিয়া, মশার সর্বশরীর জ্বলিয়া গেল।

 মশা বলিলেন,— “এ যন্ত্রণা আর আমার সহ্য হয় না। তোমাদের ঝগড়ার জ্বালায়, আমাদের ঘরের কাছে গাছের ডালে কাক-চিল বসিতে পারে না। যেখানে এরূপ বিবাদ হয়, সেখানে লক্ষ্মী থাকেন না, তালুকে মনুষ্যাদিগের শরীরে শোণিত শুষ্ক হইয়া যায়; ইচ্ছা হয় যে, গলায় দড়ি দিয়া মরি, কি বিষ খাইয়া মরি, কি বিষ খাইয়া মরি! আত্মহত্যা করিয়া আমাকে মরিতে হইবে। এই সেদিন ধর্ম্মে ধর্ম্মে আমার প্রাণটি হইয়াছে। আমি একজন আফিমখোরের গায়ে বসিয়াছিলাম। তাহার রক্ত কি তিক্ত! একশুঁড় রক্ত সব ফেলিয়া দিলাম। বারবার কুলকুচা করিয়া তবে প্রাণ রক্ষা হইল। মনে কঁরলাম,— অপঘাত মৃত্যুতে মরিব! তাই এত কাণ্ড করিয়া প্রাণ বাঁচাইলাম। কিন্তু তোমাদের জ্বালায় এত জ্বালাতন হইয়াছি যে, বাঁচিতে আর আমার তিলমাত্র সাধ নাই!”

 এইরূপে মশা স্ত্রীগণকে অনেক ভর্ৎসনা করিতে লাগিলেন। অবশেষে তাহার রাগ পড়িলে, তিনি একটু সুস্থির হইলে, রক্তবতী গিয়া তাঁহার কোলে বসিলেন।

 রক্তবতী বলিলেন,— “বাবা! আমার পচাজল আসিয়াছে।”

 মশা জিজ্ঞাসা করিলেন— “সে আবার কে? পচাজল আবার কি?”

 রক্তবতীর মা উত্তর করিলেন,— “ওগো! একটি মানুষের কন্যা! সন্ধ্যা হইতে এখানে বসিয়া আছে। রক্তবতী তাহার সহিত পচাজল পাতাইয়াছে। আহা! বালিকা এখানে আসিয়া পর্যন্ত কেবল কাঁদিতেছে। বলে, “আমি পতিহারা সতী! পতিকে নাকেশ্বরী খাইয়াছে। আমি লোকালয়ে যাইব, সেখান হইতে বৈদ্য আনিয়া আমার পতিকে ভাল করিব।' আমি তাকে বলিলাম,— 'বাছা! একটু অপেক্ষা কর। কর্ত্তাটি বাড়ী আসুন, তাহার সহিত পরামর্শ করিয়া তোমার একটা উপায় করা যাইবে। তুমি যখন রক্তবতীর পচাজল হইয়াছ, তখন তোমার দুঃখমোচন করিতে আমরা যথাসাধ্য যত্ন করিব!' রক্তবতীর পচাজল হইবে, রক্তবতী পচাজলকে লইয়া সাধ-আহ্লাদ করিবে, তোমার আর দুইটি রাণীর প্রাণে সহিবে কেন? তাদের আবার ঐ মানুষের ছানাটিকে পুষিতে সাধ হইল। সেই কথা লইয়া আমাকে তারা যা-না-তাই

৯৬
ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ