পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করিয়া পাঠাইলেন। পণ্ডিতগণ উপস্থিত হইলে, দীর্ঘশুণ্ড তাহাদিগকে মশাকুল-অনুমোদিত শাস্ত্রীয় বচন বাহির করিতে অনুরোধ করিলেন যে, এ কলিকালে ভারতবাসীদিগের পক্ষে গ্রাম হইতে গ্রামান্তরে গমন করা একেবারে নিষিদ্ধ। গ্রাম হইতে গ্রামান্তরে গমন করিলে অতি মহাপাতক হয়। সে পাপের প্রায়শ্চিত্ত নাই। তবে কলিকালে ভারতবাসীগণ করিবে কি? কলিকালের ভারতবাসীদিগের নিমিত্ত এই বিধি আছে—

সদা কৃতাঞ্জলিপুটা ব্যংশুকাঃ পিহিতেক্ষণাঃ।
ঘোরান্ধতমসে কূপে সন্তু ভারতবাসিনঃ॥
পিবস্তু রুধিরষ্ণৈষাং যাবান্তো মশকা ভুবি।
অদ্যপ্রভৃতি বৈ লোকে বিধিরোষ প্রবর্ত্তিতঃ।

 ইহার স্থূল অর্থ এই যে,— কলিকালে ভারতবাসীগণ চক্ষে ঠুলি দিয়া, হাতযোড় করিয়া, অন্ধকূপের ভিতর বসিয়া থাকিবে, আর পৃথিবীর যাবতীয় মশা আসিয়া তাহাদিগের রক্ত শোষণ করিবে।

 এইরূপ মনের মত ব্যবস্থা পাইয়া মশাগণ পরম পরিতোষ লাভ করিলেন। পণ্ডিতগণ যথাবিধি বিদায় গ্রহণ করিয়া স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন। অন্যান্য মশাগণও আপনি আপন দেশে প্রতিগমন করিলেন।


পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

খর্ব্বুর

দীর্ঘশুণ্ড মশা বলিলেন,— “রক্তবতী এক্ষণে মনুষ্য-শাবকটি তোমার। ইহাকে লইয়া তুমি যাহা ইচ্ছা হয় কর।”

 রক্তবতী বলিলেন,— “পিতা! ইনি আমার ভগিনী। ইহার সহিত আমি পচাজল পাতাইয়াছি। আমার পচাজল বিপদে পড়িয়াছে। পচাজলের পতিকে নাকেশ্বরী খাইয়াছে। কাঁদিয়া কাঁদিয়া পচাজল আমার সারা হইয়া গেল। যাহাতে আমার পচাজল আপনার পতি পায়, বাবা, তুমি তাঁহাই কর।”

 কি করিয়া কঙ্কাবতীর পতিকে নাকেশ্বরী খাইয়াছে, মশা আদ্যোপোন্ত সমুদয় বিবরণ শুনিতে ইচ্ছা করিলেন। আগাগোড়া সকল কথা কঙ্কাবতী তাঁহাকে বলিলেন।

 ভাবিয়া-চিন্তিয়া মশা শেষে বলিলেন,— “তুমি আমার রক্তবতীর পচাজল, সে নিমিত্ত তোমার প্রতি আমার স্নেহের উদয় হইয়াছে। তোমাকে আমরা কেহ আর খাইব না। স্নেহের সহিত তোমাকে আমরা প্রতিপালন করিব। যাহাতে তুমি তোমার পতি পাও, সেজন্যও যথাসাধ্য চেষ্টা করিব। আমার তালুকে খর্ব্বর মহারাজ বলিয়া একটি মনুষ্য আছে। শুনিয়াছি, সে নানারূপ ঔষধ নানারূপ মন্ত্র-তন্ত্র জানে। আকাশে বৃষ্টি না হইলে, মন্ত্র পড়িয়া মেঘে সে ছিদ্র করিয়া দিতে পারে। শিলা-বৃষ্টি পড়-পড় হইলে সে নিবারণ করিতে পারে। বৃদ্ধ স্ত্রী দেখিলেই সে বলিতে পারে,— এ ডাইনী কি ডাইনী নয়। তাহাকে দেখিবামাত্র ভূতগণ পলায়ন করে। তাহার মত গুণী মনুষ্য পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় নাই। নাকেশ্বরীর হাত হইতে তোমার পতিকে সে-ই উদ্ধার করিতে পরিবে।”

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “তবে মহাশয় আর বিলম্ব করিবেন না। চলুন, এখনি তাঁহার নিকট

কঙ্কাবতী
১০১