পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমি বড় অভাগিনী। আকাশের ভিতর যাইবার নিমিত্ত পথ অন্বেষণ করিতেছি। তা আজ এ কি হইয়াছে, বাছা, পথ কেন পাই না? একবার আকাশের ভিতর উঠিতে পারিলে আমার পতির প্রাণরক্ষা হয়। বাছা! তুমি যদি পথটি বলিয়া দাও, তো আমার বড় উপকার হয়।”

 নক্ষত্রদের বৌ উত্তর করিল, “পথ আর বাছা, তুমি কি করিয়া পাইবে? এই সন্ধ্যাবেলা এক বেটী ভূতিনী-বুড়ী আসিয়া আকাশের উপর সব চূণখাম করিয়া দিয়াছে। ও যাই হউক, আমি চুপি চুপি তোমাকে আকাশের খিড়কি-দ্বারটি খুলিয়া দিই। সেই পথ দিয়া তুমি আকাশের ভিতর প্রবেশ কর।”

 এই কথা বলিয়া, নক্ষত্রদের বৌ চুপি চুপি আকাশের খিড়কি-দ্বারটি খুলিয়া দিল। সেই পথ দিয়া কঙ্কাবতী আকাশের উপর উঠিলেন।


অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ

দুর্দ্দান্ত সিপাহী

আকাশের ভিতর গিয়া কঙ্কাবতী খোক্কোশ-শাবককে একটি মেঘের ডালে বাঁধিয়া দিলেন। তাহার পর পদব্রজে আকাশের মাঠ দিয়া চলিতে লাগিলেন। চারিদিকে দেখিলেন, নানা বর্ণের নক্ষত্রসব ফুটিয়া রহিয়াছে। নক্ষত্র ফুটিয়া আকাশকে আলো করিয়া রাখিয়াছে। অতি দূরে চাঁদ, চাকার মত আকাশের উপর বসিয়া আছেন।

 কঙ্কাবতী আকাশের ভিতর প্রবেশ করিলে চাঁদ সংবাদ পাইলেন যে, তাহার মূল-শিকড় কাটিতে মানুষ আসিতেছে। খন্তা-কুড়াল লইয়া এক মানবী উন্মত্তার ন্যায় ছুটিয়া আসিতেছে। এই দুঃসংবাদ শুনিয়া চাঁদের মনে ত্রাস হইল। আর চাঁদ কাঁপিতে লাগিলেন।

 চাঁদ মনে করিলেন,— “কেন যে মরিতে সুন্দর হইয়াছিলাম? তাই তো আমার প্রতি সকলের আক্রোশ! যদি সুন্দর না হইতাম, তাহা হইলে কেহ আর আমার মূল-শিকড় কাটিতে আসিত না। একে তো রাহুর জ্বালায় মরি, তাহার উপর আবার যদি মানুষের উপদ্রব হয়, তাহা হইলে আর কি করিয়া বাঁচি! যদি আমার গলা থাকিত, তো আমি গলায় দড়ি দিয়া মরিতাম। তা যে ছাই, এ পোড়া শরীর কেবল চাকার মত! গলা নাই তা আমি কি করিব? দড়ি দিই কোথা?”

 নানারূপ খেদ করিয়া, অতিশয় ভীত হইয়া, চাঁদ আকাশের সিপাহীকে ডাকিতে পাঠাইলেন। আকাশের সিপাহী সকল দিকে বীরপুরুষ বটে, কেবল কর্ণে কিছু হীনবল—একটু কালা অতিশয় চীৎকার করিয়া কোনও কথা না বলিলে তিনি শুনিতে পান না।

 সিপাহী আসিয়া উপস্থিত হইলে, অতি চীৎকার করিয়া চাঁদ তাহাকে সকল কথা বলিলেন। চাঁদ তাঁহাকে বলিলেন,— “আমার মূল-শিকড় কাটিতে মানুষ আসিতেছে।”

 সিপাহী ভাবিলেন যে, চাঁদ তাহাকে কালা মনে করিয়া এত হাঁ করিয়া কথা কহিতেছেন। সিপাহীর তাই রাগ হইল।

 সিপাহী বলিলেন,— “নাও! আর অত হাঁ করিতে হবে না। শেষকালে চিড় খাইয়া, চারিদিক ফাটিয়া, দুইখানা হইয়া যাবে?”

কঙ্কাবতী
১১৫