পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পুনরায় সেই ব্রাহ্মণ জিজ্ঞাসা করিলেন,— “আপনার ব্যাতোন?”

 নিধিরাম বলিলেন, — “আমি চাকরি করি না। আমার বেতন নাই। যান, আপনার বাড়ী যান। আমার জলে কাজ নাই।”

 ব্রাহ্মণ, আপনার সঙ্গী অপর বৃদ্ধ ব্রাহ্মণকে বলিলেন,— “চল, হে, এককড়িা চল বাড়ী যাই বেলা হইল, রৌদ্রে এখানে দাঁড়াইয়া থাকিবার প্রয়োজন নাই।”

 এককড়ি কোনও উত্তর না করিয়া গঙ্গার জলে নামিয়া, এককোশা জল লইলেন!। নিধিরামের নিকট আসিয়া তাঁহার হাত-মুখ ধোয়াইতে লাগিলেন।

 এককড়ির সঙ্গী বলিলেন,— “ছি! এই বিদেশী ঘাটের মড়াকে ছুইয়া ফেলিলে? তোমাকে পুনরায় স্নান করিতে হইবে। আমি বাটী চলিলাম।” এই বলিয়া এককড়ির সঙ্গী সে স্থান হইতে প্রস্থান করিলেন।

 এককড়ি নিধিরামকে উত্তমরূপে ধোয়াইয়া-মুছইয়া জলপান করাইলেন। তাহার পর নিধিরামের নাড়ী দেখিলেন। অবশেষে তিনি বলিলেন,— “মহাশয়! আমি চিকিৎসা-শাস্ত্র কিঞ্চিৎ অবগত আছি। আপনার নাড়ী নাই সত্য; শরীর শীতল হইয়াছে সত্য। কিন্তু বোধ হয়, নাড়ী শীঘ্রই গছিবে, শরীর শীঘ্রই উষ্ণ হইবে। এ-যাত্রা আপনি রক্ষা পাইবেন।”

 নিধিরাম বলিলেন,— “রক্ষা পাইতে আমার কিছুমাত্র সাধ নাই। জীবনে আমার সুখ নাই। আজ মা'র তীরে দেহত্যাগ করিব, ইহার চেয়ে আর সৌভাগ্য কি আছে?”

 বৃদ্ধ এককড়ি সে কথায় কর্ণপাত করিলেন না। দুই-চারি জন প্রতিবাসীর সহায়তায় নিধিরামকে আপনার বাড়ী লইয়া যাইলেন। যথাবিধি চিকিৎসা করিতে লাগিলেন।

 এককড়ির বাড়ীতে কেবল স্ত্রী, একটি শিশুপুত্র। এককড়ি সদবংশ-জাত কুলীন ব্রাহ্মণ, কিন্তু দরিদ্র। কন্যার টাকা লাগে, সে জন্য আজ পর্যন্ত কন্যার বিবাহ দিতে পারেন নাই। দেখিতে কন্যাটির বয়স ষোল বৎসর হইয়া পড়িল। তাঁহাদিগের ঘরে কন্যা বড় হইলে কোনও ক্ষতি নাই। তা বলিয়া কন্যার বিবাহ বিষয়ে এককড়ি নিশ্চেষ্ট ছিলেন না। কুলমর্য্যাদায় আপনার সমান অনেকের নিকট গিয়া তিনি কত মিনতি করিয়াছিলেন, কিন্তু সকলেই এত টাকা চাহিয়াছিলেন যে, এককড়ির ভিটা-মাটি বিক্রয় করিলেও সে টাকা হয় না। এককড়ির কন্যার নাম হিরণ্ময়ী। হিরণ্ময়ী পরমা সুন্দরী। কিন্তু কুলীনের ঘরে সৌন্দর্য্যের গৌরব নাই।

দ্বিতীয় অধ্যায়

বদরুদ্দিনের বেটা গবীরুদ্দিন

নিধিরামকে ঘরে আনিয়া এককড়ি সপরিবারে তাঁহার চিকিৎসা ও সেবায় প্রবৃত্ত হইলেন। ক্রমে তাহার পীড়া উপশম হইয়া আসিল। কিঞ্চিৎ সুস্থ হইলে, এককড়ি তাহার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিলেন। পরিচয় পাইয়া তখন বুঝিলেন যে, নিধিরাম উচ্চশ্রেণীর স্বভাব কুলীন। এককড়ি মনে করিলেন,— “বিধাতা এইবার বুঝি আমার প্রতি সুপ্রসন্ন হইয়াছেন। এরূপ পাত্রে কন্যা

১৩৬
ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ