পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গাছের উপর বসিয়া থাকি। আস্তে আস্তে গাছে উঠিয়া একটি খুব বড় ডালের উপর বসিয়া শীতে কাঁপিতে লাগিলেন। ক্রমে ঝড় থামিল, বৃষ্টি থামিল, দুই-একটি নক্ষত্র দেখা দিল, অন্ধকারের ঘোর নিবিড়তা অনেকটা ঘুচিল। কিন্তু এখনও আর কত রাত্রি আছে, নিধিরাম তাহা বুঝিতে পারিলেন না। প্রাতঃকালের প্রতীক্ষায় তিনি গাছের উপর বসিয়া রহিলেন।

পঞ্চম অধ্যায়

ঐ গাছে

সন্ধ্যার সময় কতকগুলি ব্রাহ্মণ এই স্থানে মড়া পোড়াইতে আসিয়াছিলেন। সেদিনকার ঘোর দুর্য্যোগে তাহাদিগের কাপড় ভিজিয়া গিয়াছিল। কাঠ, পাতা, সমস্ত ভিজিয়া গিয়াছিল। তাহারা চিতা সাজাইলেন। মড়াটি চিতার উপরে রাখিলেন, কিন্তু আগুন কিছুতেই ধরাইতে পারিলেন না। সেই ব্রাহ্মণদিগের মধ্যে কর্ত্তা-ব্যক্তি ছিলেন—উদ্ধবদাদা। মড়াটি না পোড়াইয়া জলে ফেলিয়া দিবার নিমিত্ত উদ্ধবদাদা প্রস্তাব করিলেন। কিন্তু আর সকলে সে কথায় সম্মত হইলেন না। অবশেষে উদ্ধবদাদা বলিলেন,— “তা যদি না করিবে, তবে চল, এই গ্রাম হইতে শুষ্ক কাঠ, পাতা ও পাঁকাটি লইয়া আসি। আর অমনি মদ খাইয়া আসি বৃষ্টিতে ঠিক যেন ভিজা বিড়াল হইয়া গিয়াছি। হাড়ের ভিতর কনকন করিতেছে।” মদের নাম শুনিয়া সকলে একবাক্য হইয়া সম্মত হইলেন। তার উপর পড়িয়া রহিল, কাছে কেহ রহিল না। একক্রোশ মাঠ পার হইয়া সকলে গিয়া উপস্থিত হইলেন। শুঁড়ির দোকানে বসিয়া মনের সুখে খাইতে লাগিলেন। তাহার পর, ক্রমে সেই তুমুল ঝড় উঠিল। তখন আর ঘরের বাহিরে যায় কার সাধ্য! সুতরাং সকলকে বসিয়া বসিয়া একটু ভাল করিয়া মদ খাইতে হইল। রাত্রি প্রায় দুইটার সময় ঝড় থামিল। তখন লোকের গোয়াল হইতে পাকাটি ও পাতা চুরি করিয়া উদ্ধবদাদার দল পুনরায় শ্মশান অভিমুখে যাত্রা করিলেন। রাস্তায় টলিতে টলিতে কেহ গান করিতে লাগিলেন, কেহ বাজে বকিতে লাগিলেন। বক্তা সকলেই, শ্রোতা কেহই নয়।

 একজন বলিলেন,— “উদ্ধবদাদার মদ চুকু খাওয়া আছে, আবার টিকিটও রাখা আছে।” উদ্ধবদাদা উত্তর করিলেন,— “ওহে, তোমাদের টিকি না রাখিলে চলে, আমার চলে না। বংশজ ব্রাহ্মণ, বিয়ে হয় নাই। কাওরাণীর ঘরে থাকি, দেখা-সাক্ষাৎ কাওরাণীর ভাত খাই। কেহ কিছু গোল তুলিলে অমনি টিকিট খাড়া করিয়া ধরি। বলি, “এই দেখ, বাবা, টিকি আছে।” আমনি সবাই চুপ, আর কথাটি কবার যো থাকে না।”

 কেহ কিছু গোল তুলিলে অমনি টিকিট খাড়া করিয়া ধরি। বলি— “এই দেখ বাবা, টিকি আছে।”

 আর একজন বলিলেন,— “কেন? ফোঁটা কাটিলেই তো হয়? রামেশ্বর খুড়োর মত ফোঁটা দেখাইলেই তো চলে?”

 উদ্ধবদাদা জিজ্ঞাসা করিলেন,— “রামেশ্বর খুড়ো কি করিয়াছিলেন?”

 লোকটি বলিল,— “রামেশ্বর খুড়োর নাতনীর বিবাহের কথা হইতেছিল। পাত্রপক্ষীয়

ভূত ও মানুষ
১৪৩