পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পারিল যে, কি সর্ব্বনাশ হইয়াছে! তাহারা মনে করিল যে, বিধাতা আজ তাহাদের প্রতি নিতান্ত বিমুখ হইয়াছেন। প্রতিবাসীদিগের ভয়ে অধিক আর গোলমাল করিতে পারিল না। তিনটি মৃতদেহ লইয়া খিড়কির বাগানে পুতিতে যাইল।

 নিধিরাম আড়কাটার উপর বসিয়া এই সমুদয় ঘটনা দেখিতেছিলেন। এই লোমহর্ষক ব্যাপার দেখিয়া ভয়ে তাহার শরীর কাঁপিতে ছিল। যখন তাহারা মৃতদেহ লইয়া খিড়কির বাগানের দিকে যাইল, তখন আস্তে আস্তে তিনি আড়কাটা হইতে নামিলেন, নামিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে রামনগরের দিকে দৌড়াইলেন। তাহার পরদিন রামনগরে উপস্থিত হইয়া প্রথমেই এককড়িকে কারাগার হইতে মুক্ত করিলেন। কারাগার হইতে মুক্ত হইয়া এককড়ি তাহাকে অগণ্য আশীর্ব্বাদ করিলেন। নিধিরাম বলিলেন,— “মহাশয়! আপনি আজ বাড়ী গমন করুন। আপনার নিমিত্ত বাড়ীতে সকলেই চিন্তিত আছেন। আমার এখানে বিশেষ কোনও কাজ আছে। দুই-চারি দিন পরে আমিও চণ্ডীপুরে গিয়া উপস্থিত হইব।” এককড়ি কি করিবেন? একেলা বাটী গমন করিলেন।


সপ্তম অধ্যায়

অদৃষ্টের লেখা

নিধিরাম থানায় গিয়া গত রাত্রির সমুদয় ঘটনা পুলিশের নিকট জানাইলেন। সাতভেয়েরা বদমায়েশ বলিয়া পুলিশের নিকট বিশেষরূপে পরিচিত। নিধিরামকে সঙ্গে লইয়া পুলিশের লোকে সাতভেয়েদের বাড়ী গিয়া উপস্থিত হইল। খিড়কির বাগান খুঁড়িয়া তিনটি মৃতদেহ পাইল। সাত ভাই সকলকে বঁধিয়া রামনগরে চালান করিল। পুলিশের নিকট নিধিরামকে চারি দিন থাকিতে হইল। তাহার পর তিনি পুনরায় চণ্ডীপুর অভিমুখে যাত্রা করিলেন। সমস্ত দিন পথ চলিয়া সন্ধ্যার সময় তিনি চণ্ডীপুরের নিকট একটি মাঠে গিয়া উপস্থিত হইলেন। সে স্থান হইতে এককড়ির বাড়ী অধিক দূর নয়, প্রায় একপোয়া পথ। হনহন করিয়া মাঠটুকু পার হইতেছেন, এমন সময় স্ত্রীলোকের কাতরস্বর তাঁহার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল। “ওগো, কে যাও গো! আমাকে রক্ষা কর।” এই কয়টি কথা শুনিতে পাইলেন। তাহার পর “গো-গো” শব্দ হইতে লাগিল। যেন কেহ কাপড় দিয়া স্ত্রীলোকটির মুখ বন্ধ করিয়া দিল। নিধিরাম সেই দিক পানে দৌড়িলেন!। নিকটে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন যে, চারি জন লোক একটি শায়িতা স্ত্রীলোককে কাঁধে করিয়া বলপূর্ব্বক লইয়া যাইতেছে ও একজন কাপড় দিয়া তাহার মুখ বন্ধ করিয়া রাখিয়াছে। নিধিরাম বলিলেন,— “এ কি? কে তোমরা?” তাহাদের মধ্যে একজন বলিয়া উঠিল,— “সেই বাঙ্গাল শালা রে! বেটা হিরণ্ময়ীকে বে করিবেন। বামন হইয়া চাঁদে হাত! মার বেটাকে।”

যখন এককড়ি বাড়ী ফিরিয়া আসিলেন, তখন বদরুদ্দিন অর্থাৎ বৈদ্যনাথ দেবশর্ম্মার ঘরে বড়ই ভাবনা উপস্থিত হইল। বৈদ্যনাথ মনে করিয়াছিলেন যে, অধিক দিন কারাগারের কষ্ট সহ্য করিতে না পারিয়া এককড়ি হিরণ্ময়ীর সহিত তাঁহার পুত্র গবীরুদিন অর্থাৎ গোবিন্দচন্দ্রের

ভূত ও মানুষ
১৪৯