পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্দশ অধ্যায় সমাপ্ত গিরিশের নিশ্বাস-প্ৰশ্বাস এতক্ষণ অতি সবলে পড়িতেছিল, অতি ব্যস্ত হইয়া তিনি যেন বায় আকর্ষণ করিতেছিলেন। ক্রমে নিশ্বাসের সে ভাব কমিয়া আসিল । সরলা মনে করিল যে, গিরিশ বুঝি কিঞ্চিৎ সুস্থ হইয়াছেন ও তাঁহার বুঝি নিদ্ৰা আসিতেছে। কিছুক্ষণ পরে গিরিশ মৃদুস্বরে বলিলেন,— “কি সুন্দর!” সরলা মস্তক অবনত করিয়া শুনিতে চেষ্টা করিল। গিরিশ পুনরায় বলিলেন, — “রম্য দেশ! অতি সুন্দর! সৰ্ব্বত্র শান্তি বিরাজ করিতেছে। ঘোর হরিদৃবর্ণে আচ্ছাদিত প্ৰান্তর, অদূরে নানা বৃক্ষে সুশোভিত পৰ্ব্বতশ্রেণী। মাঝে নদী কুল-কুল শব্দে বহিয়া যাইতেছে। নদীতীরে প্রস্ফুটিত ফুলগুলির কি সুন্দর বর্ণ! কি অপূৰ্ব্ব সৌরভে চারিদিক আমােদিত হইয়াছে। ঐ শুন মধুর বাদ্য! না, ও বাদ্য নয়, মন্দ মন্দ বায়ুহিল্লোলে আলোড়িত বৃক্ষপত্রের মৰ্ম্মর শব্দ। কিন্তু কি মধুর শব্দ! ঐ যে, আমার মা, নদীর অপর পারে দাঁড়াইয়া আমাকে ডাকিতেছেন। ঐ যে, আমার পিতাও তাহার পার্শ্বে দাড়াইয়া আছেন। আরও কত লোক রহিয়াছে। যাই মা যাই!! এখনি যাইব । কিন্তু নদী পার হই কি করিয়া? কতকগুলা কাদায় যে আমাকে জড়িত করিয়া রাখিয়াছে! না, এ কাদা নয়, আমার শরীর। যাই হউক, এ শরীরে আর আমার কাজ নাই। এ ক্লেদ রাশি আমাকে বড় ভারি কুরিয়া রাখিয়াছে। এ ক্লেদ রাশি হইতে একবার নিকৃতি পাইলেই আমি বীচি।। ছিছি! পুরাতৃষ্ঠপুষ্করিণীর পীকের মত কি কদৰ্য্য বস্তু! আমাকে যেন জড়ীভূত করিয়া রাখিয়াছে। একুকুন্তীঃঐগুলা দূর করিয়া পরিকৃত হইতে পারলেই আমি ও-পারে উড়িয়া যাই। তখন সব সুখ,হািৰ্বট ! যাই, মা যাই!! আর বিলম্ব নাই।” সরলা মনে করিল,— গিরিশ প্রল্যাণ্ডাওঁবুর্কিতেছেন। গিরিশের নিশ্বাস-প্ৰশ্বাস ক্রমেই কমিয়া আসিতে লাগিল । ଦ୍ବିତ ঈষৎ চক্ষু চাহিয়া ধীরে ধীরে গিরিশ পুনরায় বলিলেন,- “সরলা! তবে ভাই, যাই! লীলা, মা! তবে আমি যাই!! ঐ দেখ, নদীতীরে আমার বাবা ও আমার মা দাড়াইয়া আছেন। অতি সুন্দর অতি রম্য দেশ, সরলা! আমার পিতা-মাতার কি জ্যোতিৰ্ম্ময় শরীর হইয়াছে। ঐস্থানে যত লোক দেখিতেছি, সকলেরই ঐ রূপ দেবশরীর। ঠিক যেন নিৰ্ম্মল, সুশীতল, সূৰ্যকিরণ দ্বারা গঠিত। বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের অধীশ্বর সেই সচ্চিদানন্দ পুরুষের জ্যোতি দ্বারা ঐ প্রদেশ আলোকিত হইয়াছে। তাহার বিমল জ্যোতি দ্বারা ঐ পরলোকবাসীদের, ঐ দেবতনুসম্পন্ন লোকদিগের— দেহ ওতপ্ৰোতভাবে সিক্ত হইয়া রহিয়াছে। সামান্য জলকণা যেরূপ মহাসাগরবক্ষে ক্রীড়া করে, সেইরূপ পূর্ণজ্ঞান প্রাপ্ত হইয়া, রোগ জরা শোক তাপ হইতে বিমুক্ত হইয়া, প্রিয়জনকে সঙ্গে লইয়া, সেই সচ্চিদানন্দ পুরুষকে প্রত্যক্ষ দর্শন করিয়া, ঐ দেবতনুবিশিষ্ট জীবগণ পরমানন্দে ক্ৰীড়া করিতেছে। আমার মা আমাকে ঐস্থানে ডাকিতেছেন। সরলা! আর আমি অপেক্ষা করিতে পারি না। লীলা মা! তোমরা যখন আসিবে, তখন তোমাদের জন্যও আমি ঐ নদীতীরে দাঁড়াইয়া থাকিব। ঐস্থানে রোগ নাই, শোক নাই, কোন দুঃখ নাই। তোমরা দুই জনে আসিলে, তখন সকলে একসঙ্গে থাকিব। আর কখন ছাড়াছড়ি হইবে না। সরলা! লীলা! তবে এখন আমি বিদায় হই ।” কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া গিরিশ পুনরায় ধীরে ধীরে বলিলেন,- “কিন্তু সরলা! কিন্তু লীলা! তোমাদের আমি গুটিকত কথা বলিয়া যাই । আমার ঐ শেষ কথা । আমার কথাগুলি কখন মুক্তা-মালা sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro V)