পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দর্শন করেন নাই। ঐ ভূত ব্যতীত ক্ষণকালের নিমিত্ত আর একজন উপদেবতা তাহার নয়নগোচর হইয়াছিল। উপরিউক্ত ভূতকে দেখিয়া তিনি চক্ষু বুজিলেন। কিছুক্ষণ পরে উষ্ণ বায়ুস্রোত তাহার মুখের উপর পাড়িতে লাগিল। তিনি আর একবার চাহিয়া দেখিলেন। দেখিলেন যে, ঠিক তাঁহার সম্মুখে এক বৃদ্ধা ডাকিনী হাঁ করিয়া, দীর্ঘ ও ঘোর রক্তবর্ণ জিহবা, বারবার লেহন করিতেছে। বৃদ্ধা ডাকিনীর একটিও দন্ত নাই। সৰ্ব্বশরীর তাহার শুষ্ক হইয়া গিয়াছে। অতি ভয়ানক আকৃতি। ডাকিনীর জিহ্বা তাঁহার নাসিকা স্পর্শ করে আর কি! ডাকিনীকে দেখিয়া তিনি তৎক্ষণাৎ চক্ষু মুদিত করিলেন। গৌরীশঙ্কর পুনরায় জপ করিতে লাগিলেন। চারিদিকে ভূত-প্ৰেতগণ নৃত্য করিতে লাগিল। এই সময় বারবার ভূমিকম্প আরম্ভ হইল। গৌরীশঙ্কর মনে করিলেন যে,—ভূমিকম্পে পৃথিবী বিদীর্ণ হইয়া গিয়াছে। মড়ার সহিত যেন তিনি পাতাল-পুরীতে নামিয়া যাইতেছেন। কিন্তু পরীক্ষণেই হুশ করিয়া উঠিয়া পড়িলেন। আর একবার মনে হইল যে, মড়ার সহিত তিনি যেন শূন্যে উড়িতেছেন; কিন্তু পরীক্ষণেই হুশা করিয়া নামিয়া পড়িলেন। সেই সময় তাহার বুক টিপু টিপু করিতে লাগিল। হৃৎপিণ্ড ফাটিয়া যাইবার উপক্রম হইল। যাহা হউক, অনেক কষ্টে মনকে স্থির করিয়া পুনরায় তিনি জপে প্ৰবৃত্ত হইলেন। ক্রমে ভূত-প্রেতের উপদ্রব নিবৃত্ত হইল। পৃথিবী আর একবার স্থির হইল। এই সময় অতি সুমধুর বামা স্বরে নিকটে কে আসিয়া গৌরীশঙ্করকে বলিল,— “নাথ! অনেক কষ্ট করিয়াছ। এক্ষণে উঠা! আমি আসিয়াছি। বিবাহের নিমিত্ত তুমি লালায়িত হইয়াছিলে, এখন চাহিয়া দেখ, দেবী তোমার নিমিত্ত কিরূপ পত্নী প্রেরণা করিয়াছেন। নাথ! চিরকাল তোমাকে আমি প্রেমে আবদ্ধ রাখিব। যে স্বগীয় সুখ শচী করিতে পারে না, সেইরূপ নানা সুখে তোমাকে পরিতোষ করিব। হে, প্ৰাণনাথ কর। ঐ বীভৎস আসনের উপর আর বসিয়া থাকিবার আবশ্যক নাই।” কামিনীর স্বরে গৌরীশঙ্করের হৃদয়ে যেন সুধাসিঞ্চন করিল। তিনি চাহিয়া দেখিলেন,- “ যৌবনপ্রাপ্তপ্রায় চতুৰ্দশ বর্ষ বয়স্ক এক কামিনী। তাহার রূপে সেই অমাবস্যা রাত্রিও হইয়াছিল। কামিনীর মধুরবচনে গৌরীশঙ্করের হৃদয় শীতল হইল, তাহার স্থির-বিদ্যুৎসম রূপ মাধুরী দর্শনে তাঁহার মন মােহিত হইল। তিনি মনে করিলেন—“কাজ কি আর ধনে? দেবী যখন কৃপা করিয়া এরূপ জগন্মোহিনী যুবতীকে আমার নিকট প্রেরণ করিয়াছেন, তখন ইহাকেই লইয়া পরমসুখে আমি জীবন অতিবাহিত করি। আমার যতই ধন ঐশ্বৰ্য হউক না কেন, সমস্ত পৃথিবী খুঁজিয়া আমি এরূপ নারী পাইব না। আর জপে প্রয়োজন নাই, উঠিয়া ইহাকে হৃদয়ে ধারণ করি।” এইরূপ চিন্তা করিয়া গৌরীশঙ্কর শবের উপর হইতে উঠিবার নিমিত্ত উপক্রম করিলেন; কিন্তু সেই সময় কে যেন তাঁহার পিঠে চাপড় মারিয়া বলিল,— “কর কি? এ যে সব মায়া! জপ৷ পরিত্যাগ করিলে মুহূৰ্ত্তমধ্যে হয় তুমি মৃত্যুমুখে পতিত হইবে, আর না হয় পাগল হইয়া যাইবে।” গৌরীশঙ্করের তখন যেন চমক হইল। তিনি মনে করিলেন,- “সত্য বটে, এ সমুদয় মায়া। কিন্তু এ কামিনীর রূপ দেখিয়া কেহই স্থির থাকিতে পারেন না। প্ৰাণ যায় সেও স্বীকার, তথাপি তাহার নিকট ধাবিত হইতে ইচ্ছা হয়। দূর হউক, আর ইহার দিকে চাহিয়া দেখিব না।” এই বলিয়া গৌরীশঙ্কর চক্ষু মুদিত করিলেন। কামিনী অতি সুমধুর স্বরে নানারূপ সাধ্য-সাধনা করিল; কিন্তু গৌরীশঙ্কর কিছুতেই আর চক্ষু উন্মীলন করিলেন না। নিরাশ হইয়া মায়াময়ী অন্তৰ্হিত হইল। পৃথিবী পুনরায় নীরব হইল। গৌরীশঙ্কর চাহিয়া দেখিলেন যে, এখন আর সে স্থানে বন্য পশু অথবা ভূত-প্ৰেত প্রভৃতি কিছুই নাই। এখন চারিদিকে কেবল নিবিড় অন্ধকার। ମୁ ଓମ-୩୩ sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro 8Հ6: