পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাড়ীটি পরিপূর্ণ হইয়াছে, আর উপরে রাজাবাবুর ঘরে গিয়া দেখিলাম যে, ঘরের মাঝখানে একখানি কাপড় পুড়িতেছে। নিকটে কাঠের বঁটি-সম্বলিত একটি লোহার সিক পড়িয়া আছে। রাজাবাবু খাটের উপর চক্ষু মুদিত করিয়া পড়িয়া আছেন। কালা-বাবাকে মাটিতে ফেলিয়া বীরু তাহার বক্ষঃস্থলে হাঁটু দিয়া তাহাকে ধরিয়া আছে। “ঘরে প্রবেশ করিবামাত্র বীরু, আমাকে বলিল,- “বড়ালমহাশয়! শীর্ঘ এই ভক্ত তপস্বী বেটাকে বধিয়া ফেলুন। রাজাবাবুকে এ খুন করিয়াছে।” নিকটে কাঠের আলনা হইতে আমি একখানি কাপড় লইলাম। সেই কাপড় দিয়া বীরুতে আমাতে সন্ন্যাসীকে খাটের পায়াতে বাধিয়া ফেলিলাম। “তাহার পর রাজাবাবুকে গিয়া দেখিলাম। দেখিলাম যে, তিনি জীবিত আছেন। তাঁহার শিয়রে একখানি রুমাল ও একটি শিশি পড়িয়া আছে। রুমাল ও শিশি হইতে একপ্রকার উগ্র মিষ্টগন্ধ বাহির হইতেছে। তখন আমি বুঝিলাম যে, যে ঔষধ দিয়া ডাক্তারেরা রোগীকে অজ্ঞান করে, সেই ঔষধ প্রয়োগ করিয়া রাজাবাবুকে সন্ন্যাসী অজ্ঞান করিয়াছে। মাথায় জল দিয়া ও নানাপ্রকার শুশ্ৰষা করিয়া আমরা রাজাবাবুর চৈতন্য উৎপাদন করিলাম। তিনি উঠিয়া বসিলেন। “ঘরের মধ্যস্থলে যে কাপড় পুড়িতেছিল, তাহার আগুন আমরা নিবাইয়া ফেলিলাম। কাপড়ের সামান্য একটু অংশ অবশিষ্ট ছিল, পুড়িয়া যায় নাই। পাড় দেখিয়-চিনিতে পারিলাম যে, তাহা সোনা-বীেয়ের শাড়ী। লোহার সিক কোথা হইতে আসিল, কে আনিল, কেন আনিল, তাহা আমরা বুঝিতে পারিলাম না। সিকটি হাতে করিয়া যে, ঘোর উত্তপ্ত, অনেকক্ষণ পৰ্যন্ত কে যেন ইহাকে আগুনে রাখিয়াছে। তাড় আমি উহা ফেলিয়া দিলাম। মনে করিলাম যে, কাপড়-পোড়া আগুনে এইরূপ “রাজাবাবু আমাদের দুইজনকে সম্বোধন কৃষ্ট্র y বীরু ! এই পাষণ্ড আমার প্রাণবধ করিত্যুে হইয়াছিল। কিন্তু ইহাকে আমি পুলিসে পারি না । মকদ্দমা করিতে গেলে নটীরূপ ঘরের কথা বাহির হইয়া পড়িবে। কিন্তু এই নরাধমকে একেবারে ছাড়িয়া দিতেও পারি না। ইহার কোনরূপ দণ্ড করিতে হইবে।” “বীরু বলিল,- “বেটার নাক কাটিয়া লইতে হইবে।” আমি-ও সেই প্ৰস্তাবে সম্মত হইলাম। সমুদয় কথা গোপন রাখিবার নিমিত্ত আমরা দুই জনে তিন সত্য করিলাম।” তাহার পর রাজাবাবু বলিলেন,- “বেটার নাকটি ভালরূপে কাটিয়া লইতে হইবে। নাকটি আমি চিহ্নস্বরূপ রাখিয়া দিব।” বীরু ও আমি কালা বাবার হাত-পা উত্তমরূপে ধরিয়া রহিলাম। সুতীক্ষু ছুরি বাহির করিয়া রাজাবাবু নিজ হাতে অতি সুন্দরীরূপে তাহার নাকটি কাটিয়া লইলেন। তাহার পর একটি শিশিতে তাহা রাখিয়া ব্ৰাণ্ডি দ্বারা শিশিটি পরিপূর্ণ করিলেন। সন্ন্যাসীকে আমরা ছাড়িয়া দিলাম। তাহার বক্ষঃস্থল রক্তে ভাসিয়া যাইতে লাগিল। জলে ভিজাইয়া সেই রুমালখানি আমরা তাহাকে দিলাম। রুমাল দিয়া নাক মুছিতে মুছিতে সন্ন্যাসী পলায়ন করিল।” রায়মহাশয় জিজ্ঞাসা করিলেন,- “সোনা-বীে এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?” বড়ালমহাশয় উত্তর করিলেন,- “বাবাজী তাঁহাকে মদ্যপান করিতে শিক্ষা দিয়াছিলেন। সেই অবধি তিনি স্বামীর নিকট শয়ন করিতেন না। তাহার। পূৰ্ব্বদিকে যে ঘরে রাজাবাবু শয়ন করিতেন, তাহার পাশের ঘরে তিনি থাকিতেন। রাত্রিতে আমাকে জপ করিতে হয়, এই বলিয়া

                • দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com ~ G(S