পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম অধ্যায় মাতা ও সুবালা ভদ্রমাস পড়িল। মাসের শেষে পুনরায় খাদা ভূতের আবির্ভাব হইল। “হুহু”, “হুহু”, আস্তে আস্তে এই শব্দ করিয়া রাত্রিকালে খাদা ভূত মাঠেঘাটে বেড়াইতে লাগিল। কিন্তু খাদা ভূতের উপদ্রব অধিক দিন থাকে না। ছয় সাত দিন পরে সেই বিকট রবে হাক দিয়া সে কোথায় চলিয়া যায়। সেই কয়দিন গ্রামের লোক ঘোরতর শঙ্কিত হইয়া কালব্যাপন করে। এবারও অরন্ধনের পূর্ব রাত্ৰিতে খাদা ভূত বড়ালমহাশয়ের হাড়ি খাইয়া গেল। রায়মহাশয়ের বাহির বাটীতে দুইটি ঘরে বড়ালমহাশয় নিজে, তাহার গৃহিণীও ও তাঁহার শ্যালকপুত্ৰ ধনুকধারী নামক দশ বৎসরের একটি বালক, এই কয়জনে বাস করিতেন। নিকটে একটি ছােট ঘরে তাঁহাদের রান্না হইত। অরন্ধনের নিমিত্ত বড়াল-গৃহিণী যাহা কিছু রাধিয়া রাখিয়াছিলেন, খাদা ভুত তাহা খাইয়া গিয়াছিল। আর একটি আশ্চৰ্য্য কথা-আহারাদি করিয়া খাদা ভূত সম্মুখের রকে বসিয়া মলত্যাগ করিয়াছিল। সকলেই ঘোরতর বিস্মিত হইল। গ্রামের বৃদ্ধ লোকেরা বলিল,— “এই বয়সে অনেক ভূত দেখিয়াছি, অনেক ভূতের গল্প শুনিয়াছি; কিন্তু খাদা ভূতের ন্যায় অদ্ভুত ভূত কখন দেখি নাই। ভূতে পান্তাভাত ও কচুশাক খায়, কচুশাক খাইয়া মলত্যাগ করিয়া যায়, এরূপ কথা কখন আমরা শুনি নাই।” রায় মহাশয়ের বাগানের পূৰ্ব্বভাগে বৃহৎ এক বঁাশঝড়ছিল। এবার সেই বীশঝাড়ের ভিতর বসিয়া খাদা ভূত হুঙ্কার দিল। পরদিন সে যথারীতি (ফেঁথায় সুবালার বয়ঃক্রম এক্ষণে সাত বৎসর। কন্যাটি যে খুব রূপবতী ছিল, তাহা নহে। তাহার গায়ের বর্ণ খুব গীেরবর্ণ ছিল না, গঙ্গাজলী গমের ন্যায় এক প্রকার উজ্জল মাজা মাজা বর্ণ ছিল। নাসিকাটি টিকোলা ও চক্ষু দুইটি চাকচিক্যশালী কৃষ্ণবর্ণের ছিল। নিবিড় কেশরাশি হাঁটু পৰ্যন্ত পড়িত। মুখের ও শরীরে এক প্রকার চমৎকার মেয়েলি ভাব ছিল। তাহার মৃদুমধুর ভাব ও লজ্জাশীলতা দেখিয়া এবং সুমিষ্ট কথা শুনিয়া সকলেই সুবালাকে ভালবাসিত। মৃত্যুর একদিন পূৰ্ব্বে মাতা সুবালাকে ডাকিয়া কাছে বসাইলেন। মাতা বলিলেন, — “সুবালা! তুমি সাত বৎসরের বালিকা, আমার সকল কথা এখন তুমি বুঝিতে পরিবে না। কিন্তু কথাগুলি তুমি মনে করিয়া রাখিও, মাঝে মাঝে আমার কথাগুলি স্মরণ করিও। যত বড় হইবে, তত তুমি আমার কথার অর্থ বুঝিতে পরিবে। সুবালা! মা! আর তুমি আমাকে দেখিতে পাইবে না।” সুবালা হাপুসা নয়নে কাঁদিতে লাগিল। চক্ষুর জলে তাহার বক্ষঃস্থল ভাসিয়া যাইতে লাগিল। কঁদিতে কঁদিতে সে বলিল,— “না মা। আমাকে ছাড়িয়া তুমি যাইও না। তুমি গেলে আমি মাতা বলিলেন,- “তোমার দাদামহাশয় ও দিদিমণি তোমাকে ভালবাসেন। তুমি তাঁহাদের নিকট থাকিবে। সুবালা! তোমার দিদির শোকে আমি বড় কাতর হইয়া আছি। তাহাকে স্মরণ করিয়া সৰ্ব্বদাই আমার বুক ফাটিতেছে। তোমার দিদি যে স্থানে গিয়াছে, আমি সেই স্থানে যাইতেছি।” \ኳ6አby sib Prize uskla »ižo 333) a www.amarboi.comio