পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিদিমণির জন্য সুবালা অনেক কঁদিলেন। দিদিমণির মৃত্যুকালে তাঁহাকে আনয়ন করা হয় নাই, সেজন্য বড়ালমহাশয়কে তিনি অনেক ভৎসনা করিলেন। “দিদিমণির শেষ অবস্থায় তোমরা আমাকে তাহার সেবা করিতে দিলে না,”৷ এই কথা বলিয়া সুবালা খেদ করিতে লাগিলেন । রায়-গৃহিণীর শ্ৰাদ্ধাদি ক্রিয়া মহাসমারোহের সহিত সম্পন্ন হইল। বিজয়বাবুকে সং দেওয়া হইয়াছিল; কিন্তু তিনি আসিলেন না অথবা নিমন্ত্রণ রক্ষা করিবার নিমিত্ত কাহাকেও প্রেরণ করিলেন না। জ্যেষ্ঠভ্রাতা রায়মহাশয়ের মৃত্যু হইলে কলিকাতায় তিনি স্বতন্ত্রভাবে শ্ৰাদ্ধ করিয়াছিলেন। বড় বধু-ঠাকুরাণীরও তিনি স্বতন্ত্রভাবে শ্ৰদ্ধা করিলেন। তাহার পর ধীরে ধীরে দিন কাটিতে লাগিল। সুবালা সমুদয় সম্পত্তির অধিকারিণী হইলেন। বিধবা পিসীমায়ের সহিত তিনি বাস করিতে লাগিলেন। কাকা মহাশয় মাঝে মাঝে আসিয়া তাহাদিগকে দেখিতেন শুনিতেন। রায় মহাশয় ও রায় গৃহিণীর পরলোকে গ্রামের লোকের আনন্দ হইল। তাহারা ভাবিল যে, ভূতে অথবা মানুষে আর আমাদিগকে উৎপীড়িত করিবে না। সুবালা লক্ষ্মীস্বরূপা দেবী। তিনি আমাদের সকল দুঃখ দূর করবেন। রায়বাড়ীর লোকদিপের সহিত গ্রামবাসীদিগের এখন বিলক্ষণ সদ্ভাব হইল। কিন্তু ধনুকধারীর উপর এখনও তাঁহাদের সম্পূর্ণ রাগ রহিল। ള് ○ ፬በዟ পূৰ্ব্ব হইতেই সুবালার গুণে গ্রামের লোক মুগ্ধ হইয়াছিল। শৈশবকাল হইতে তিনি এই গ্রামে প্রতিপালিত হইয়াছিলেন। সকলে তাঁহাকে জানিত, তিনিও সকলকে জানিতেন। ব্ৰাহ্মণ, শূদ্ৰ, হিন্দু, মুসলমান, সকল শ্রেণীর লোকের সহিত তাঁহার একটা না একটা সুবাদ-সম্পর্ক ছিল। কাহাকেও দাদা, কাহাকেও দিদি, কাহাকেও মাসী বলিয়া তিনি ডাকিতেন। গ্রামের লোকও তাঁহাকে সেইরূপ সম্পর্ক ধরিয়া ডাকিত। যথাসাধ্য তিনি লোকের দুঃখ দূর করিতেন। যাহার দুঃখ দূর করিতে পারিতেন না, সুমিষ্ট কথায় তাহাকে প্ৰবোধ দিতেন। তাঁহার দয়ামায়া সম্বন্ধে শত শত গল্প এই গ্রামে প্রচলিত আছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ দুইটি ঘটনার বিষয় এ স্থানে কেবল উল্লিখিত হইল। এ সমুদয় ঘটনা রায়-গৃহিণী জীবিত থাকিতেই ঘটিয়াছিল। সকলে তাঁহার আত্মীয়, সকলে তাঁহাকে স্নেহ করে, সেজন্য সুবালা একেলা নিৰ্ভয়ে এ-বাড়ী সে-বাড়ী করিয়া বেড়াইতেন। একদিন অপরাহে তিনি গ্রামে গিয়াছিলেন। পথের পার্শ্বে সুগ্ৰীব চঙ্গের ঘর ছিল। সুগ্ৰীব গরিব মানুষ, মজুরী করিয়া সে দিনপাত করে। তাহার কেবল একখানি চালাঘর। সুবালা দেখিলেন যে, সেই ঘরের দাওয়া অর্থাৎ পিড়ার একপার্শ্বে সুগ্ৰীবের স্ত্রী মায়া, ভাত রাধিতেছে। কিছুদূরে তাহার তিন কি চারি বৎসরের বালক ধামি হাতে করিয়া উচ্চৈঃস্বরে কাঁদিতেছে। সুবালা জিজ্ঞাসা করিলেন,- “মায়া! তোমার ছেলে কাঁদিতেছে কেন?” মায়া কোন উত্তর করিল না। সুবালা নিকটে আসিয়া পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন,- “ভুলু কাঁদিতেছে কেন, Vrd দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.comশ্মির্ত্যািক্যনাথ রচনাসংগ্ৰহ