পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভূ মি কা

বাংলা ব্যঙ্গরসমূলক রচনায় ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের স্থান সমালোচকেরা ও সাহিত্যের ইতিহাসকারেরা এত উঁচুতে নির্দেশ করেছেন যে, কেউ কেউ তাকে এক্ষেত্রে অদ্বিতীয় বলতেও কুণ্ঠিত হন নি। অথচ এখন তিনি প্রায় বিস্মৃত, তাঁর রচনাও দুর্লভ। এর কারণ এই নয় যে, তিনি পাঠযোগ্যতা হারিয়েছেন। এর কারণ, পূর্বগামী লেখকদের সম্পর্কে আমাদের এক ধরনের উদাসীনতা।

 নিজের লেখার মতোই ত্রৈলোক্যনাথের জীবনকাহিনী কৌতুহলোদ্দীপক। দারিদ্রের সঙ্গে এত সংগ্রাম, এত রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, পরিণামে এত প্রতিষ্ঠা ও সম্মান খুব কম মানুষের জীবনেই দেখা যায়। তার জন্ম ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে (৬ শ্রাবণ ১২৫৪)। তাঁর পিতা দরিদ্র ব্রাহ্মণ বিশ্বম্ভর মুখোপাধ্যায়, বাস চব্বিশ পরগণা জেলার শ্যামনগরের কাছে রাহুত গ্রামে। ত্রৈলোক্যনাথ জনক-জননীর দ্বিতীয় পুত্র। তাঁর জ্যেষ্ঠ রঙ্গলাল মুখোপাধ্যায় ছিলেন কয়েকটি গদ্যপদ্য গ্রন্থের রচয়িতা।

 গ্রামের স্কুলে ও পাঠশালায় ত্রৈলোক্যনাথের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। বারো বছর বয়সে তিনি হুগলি-চুঁচুড়ার ডফ সাহেবের স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে (এখনকার চতুর্থ শ্রেণীতে) ভর্তি হন এবং পরের বছর ডবল প্রমোশন পেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে উন্নীত হন। ১৮৬২ সালে ম্যালেরিয়ার প্রকোপে একে একে তাঁর পিতামহী, মাতা ও পিতার মৃত্যু হয়, তিনি নিজেও প্লীহাজ্বরে আক্রান্ত হন। তখন তিনি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র, সেখানেই তাঁর আনুষ্ঠানিক পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটে।

 ত্রৈলোক্যনাথ শৈশবকালে যেমন দুরন্ত ছিলেন, যেমনি ছিলেন উদ্ভাবনী প্রতিভার অধিকারী। ন বছর বয়সে নতুন এক ভাষাসৃষ্টিতে এবং তার উপযোগী বর্ণমালা উদ্ভাবনে প্রবৃত্ত হন। কাঠের ফলকে ও মাটির চাকতিতে এই বর্ণমালা খোদাই করে তিনি মুদ্রণের আয়োজন করেন। এই পদ্ধতিতে সেই অল্প বয়সেই তিনি হেঁয়ালি, শ্লোক ও গান রচনা করেছিলেন।

 পিতামাতার মৃত্যুর পরে তিনি এক নিকটাত্মীয়ের আশ্রয়ে থাকেন, কিন্তু সেখানেও দারিদ্র প্রবল।১৮৬৫ সালে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে মানভূমে এক