পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সম্পন্ন হইল না। পায়রা দেখাইবার নিমিত্ত রাধা গোয়ালিনী একদিন পাগলীকে সঙ্গে করিয়া আনিয়াছিলেন। সেই সময় নীলকণ্ঠ পক্ষিগণ পায়রাদিগের উপর উপদ্রব আরম্ভ করিয়াছিল। সুবালা বলিলেন- “চঞ্চল৷ এই লাঠি হাতে করিয়া এই স্থানে বসিয়া থাক। নীলকণ্ঠ পাখী। আসিলে তাড়াইয়া দিও।” পাগলী সে কােজ উত্তমরূপে করিল। তাহার ভয়ে নীলকণ্ঠ পাখীরা পায়রাদিগের উপর আর উপদ্ৰব করিতে সাহস করিল না। তাহাদিগের জন্য যে কয়টি নূতন খোপ প্রস্তুত হইয়াছিল, সেই খোপে গিয়া তাহারা বাস করিতে লাগিল । পরদিন প্ৰাতঃকালে সুবালা পক্ষী-ভোজনের সময় পাগলীকে দেখিয়া তাহারা সেরূপ ভয় করিল না। একপ্রকার আশ্চৰ্য-জ্ঞানবলে তাহারা বুঝিতে পারিল যে, এ আমাদের অনিষ্ট করিবে: না। সুবালা যেদিন পাগলীকে পরিবেশণ করিতে দিলেন। সুবালাকে পশু-পক্ষিগণ যেরূপ ভালবাসিত, ততটা না হউক, কিন্তু পাগলীর সহিতও তাঁহাদের সদ্ভাব হইল। গোশালায় গাভীদিগকে, ছাদে কপােতগণকে, জলাশয়ে মৎস্যগণকে ও বৃক্ষতলে পক্ষিগণকে আহার দিবার নিমিত্ত ক্ৰমে ক্ৰমে সুবালা পাগলীকে নিযুক্ত করিলেন। কখন দুইজনে একসঙ্গে, কখন পাগলী একেলা, এখন সুবালা একেলা বৃক্ষতলে গিয়া পক্ষীদিগকে ভোজন প্ৰদান করিতেন। সুবালা যখন সেদিন খুড়ামহাশয়ের বাড়ী যাইতেন, তখন পাগলী একেলা এই কাজ করত। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ন্যায় তাহার মুখ সৰ্ব্বদাই বিষন্ন হইয়া থাকিত। জীবজন্তুদিগের সহবাসে তাহার মন এখন পূৰ্ব্বাপেক্ষা প্ৰসন্নভােব ধারণ করিল। তাহার মাতা ও র সহিত দুই একটি কথা ব্যতীত অন্য কোন নৱলোকের সহিত সে কথোপকথন না। কিন্তু নিভৃতে গোয়ালে বসিয়া গরুদিগের সহিত অথবা ছাদে পায়রাদিগের অথবা ঘাটে মৎসাদিগের সহিত, অথবা গাছতলায় পক্ষী ও কাঠবিড়ালদের সহিত জনৈক গল্প-গাছা করিত। কিন্তু নিকটে মানুষ গেলেই অমনি সে নীরব হইত, তাহার তখন আর একটিও কথা বাহির হইত না । বাঘার গল্প করিতে করিতে পক্ষীর কথা বাহির হইয়া পড়িল । সুবালা যখন সাত কি আট বৎসরের বালিকা ছিলেন, একদিন তিনি গ্রামের ভিতর বেড়াইতে গিয়াছিলেন। তিনি দেখিলেন যে, জনকয়েক বালক ছোট একটি কুকুর-শাবকের পায়ে দড়ি বঁাধিয়া তাঁহাকে পুষ্করিণীর জলে ফেলিতেছে ও তুলিতেছে! নিদারুণ যাতনায় কুকুরছানাটি কঁাপিতেছে। তাহার ক্লেশ দেখিয়া নিষ্ঠুর বালকগণ হাততালি দিয়া আনন্দে নৃত্য করিতেছে। তাঁহাদের নিষ্ঠুরতা। দেখিয়া, সুবালার সাৰ্ব্বাঙ্গ জুলিয়া গেল। অনেক ভৎসনা করিয়া তাহাদের নিকট হইতে কুকুরছানাটি তিনি কাড়িয়া লইলেন। জলে ও কাদায় তাহার। সৰ্ব্বশরীর ময়লা ও ভিজা হইয়াছিল। সেই অবস্থাতেই সুবালা তাহাকে বুকে লইয়া বাড়ী আসিলেন। ছানাটিকে তিনি প্রতিপালন করিতে লাগিলেন এবং তাহার নাম বাঘা রাখিলেন। কালক্রমে বাঘা সাহসী ও বিক্রমশালী কুকুর হইয়া উঠিল। দৌড়াদৌড়ি করিয়া সুবালার সহিত খেলা করিতে অথবা তাহার সঙ্গে সকল স্থানে যাইতে বাঘা বড় ভালবাসিত। কিন্তু অন্য কুকুরের সহিত সে ঝগড়া কিরিত, বিড়াল দেখিলে তাড়া করিয়া যাইত, পক্ষীদিগের সে ভয় দেখাইত, সেজন্য সকল সময়ে সুবালা তাহাকে সঙ্গে যাইতে দিতেন না। বাঘাকে লইয়া সুবালা একদিন বাগানে গিয়াছিলেন। বাঘা ছুটাছুটি করিয়া খেলা করিতেছিল। সহসা নদীর দিকে একটা কলরব উপস্থিত হইল। বাঘা গৰ্জ্জন করিয়া উঠিল। কুকুর পাছে সেই দিকে দৌড়িয়া যায়, সেজন্য নিকটে ডাকিয়া সুবালা তাহার গলার অলস্কৃত পাপের পরিণাম। sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro Vs