পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্ৰমে বৃদ্ধ হইয়া পড়িতেছি। অল্পদিন পরে পৃথিবী পরিত্যাগ করিয়া আমাদিগকে পরলোকগমন করিতে হইবে। তখন বাঙ্গালী জাতির মান-সন্ত্রম ও গৌরব তোমাদের হস্তে ন্যস্ত হইবে। বাঙ্গালী জাতির নানারূপ কলঙ্ক আছে। বাঙ্গালী জাতি ভীরু, বাঙ্গালী সত্যকথা বলে না, প্ৰতিজ্ঞা পালন করে না, কাৰ্য্যের ভার গ্ৰহণ করিয়া সে কাৰ্য সম্পন্ন করে না। সেই জন্য বাঙ্গালী পরস্পরকে বিশ্বাস করে না, আর সেই নিমিত্ত পাঁচজনে মিলিত হইয়া কোন কাজ করিতে পারে না। অন্য জাতির জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত দেখিয়াও বাঙ্গালীর জ্ঞান হয় না। তিনশত বৎসর পূৰ্ব্বে এক ইংরাজ বণিকসম্প্রদায় জনক'ত মুহরিকে এ দেশে প্রেরণ করিলেন। বিলাত হইতে ভারত তখন ছয় মাসের পথ ছিল। তথাপি সেই বণিকসম্প্রদায় ঐ জনকয়েক মুহরির সহায়তায় এই বিশাল ভারত-সাম্রাজ্য সংস্থাপিত করিলেন। এখনও দেখ—বিলাতে থাকেন ধনী, ভারতের পূৰ্ব্বপ্রান্তে আসামের নিবিড় বনে তাহারা সামান্য কৰ্ম্মচারী প্রেরণ করেন। কৰ্ম্মচারী বন কাটিয়া চায়ের ক্ষেত্র করিয়া বিপুল অর্থ উপাৰ্জন করেন। কিন্তু বাঙ্গালী কোন কাৰ্য্যের সূচনা করিয়া, কেবল দুই ক্ৰোশ মাত্র দূরে কৰ্ম্মচারী পাঠাইয়া নিশ্চিন্ত মনে থাকিতে পারে না। বহদিন হইতে এইরূপ নানা প্ৰকার কলঙ্কের পসরা বাঙ্গালী জাতি মাথায় বহন করিয়া আসিতেছে। বৎসগণ! বাঙ্গালী জাতির এই সমুদয় কলঙ্ক তোমাদিগকে দূর করিতে হইবে। প্রধান কথা এই যে,সত্য, সত্য, সত্য ভিন্ন আমাদের অন্য গতি নাই। সৰ্ব্বদা সত্যকথা বলিবে। ভুলিয়াও কখন অসত্য কথা বলিবে না। কখনও সত্যপথ হইতে বিচলিত হইবে না। “অসত্য কথা, অসত্য আচরণ বাঙ্গালী একেবারেই জানে না,”—যখন আমাদের এই যশ জগতে ঘোষিত হইবে, তুৰ্থন বাঙ্গালীর ঘর ধনধান্যে পূর্ণ হইবে, বাঙ্গালীর বিদ্যা, বুদ্ধি ও ধৰ্ম্মপ্রভাবে জগতে নূতন সঞ্চার হইবে, সকল জাতি তখন বাঙ্গালীকে পূজা করবে, বাঙ্গালীর গৌরবে তাঙ্গুৰত্নমূৰ্ত্তি পৃথিবী আলােকিত হইবে। বৎসগণ৷ একমাত্র সত্য, সত্য, সত্য ভিন্ন আর আমাদূেরুজ্জাম্য গতি নাই। পুনরায় বলি,—সত্যপথ হইতে অঁমার এই একান্ত মিনতি। দুর্ক)ৰ্মামি প্ৰদান করি। অন্যের কােছ হইতে কিছু লইব, অন্য লোক আমাকে দিউক,—কখনও এরূপ কামনা করিবে না। নীচপ্রবৃত্তিবিশিষ্ট লোকেরা এইরূপ কামনা করে। যাহারা অন্য লোকের নিকট হইতে কিছু লইতে চেষ্টা করে, জগদীশ্বর চিরকাল তাহাদিগকে পর-প্রত্যাশী করিয়া রাখেন। আমি এরূপ অনেক লোককে দেখিয়াছি। তাহাদের মনে লজ্জা নাই। কিন্তু সাধারণের নিকট তাহারা যে কিরূপ ঘূণার পাত্র, তাহা তাহারা জানে না। কাহারও নিকট হইতে যেন কিছু লইতে না হয়, অন্য লোককে যেন দিতে পারি, জগদীশ্বরের নিকট ও পিতৃলোকের নিকট সৰ্ব্বদা এইরূপ প্রার্থনা করিবে।” তাহার পর সুবালার দিকে চাহিয়া তিনি বলিলেন,- “মা সুবালা সৰ্ব্বগুণে গুণান্বিতা তুমি, তোমাকে আমি এখন এই আশীৰ্ব্বাদ করি যে, তুমি সত্যবাদী, ধৰ্ম্মপরায়ণ ও কৰ্ত্তব্যপরায়ণ বীরপুত্রদিগের জননী হও।” সুবালাকে লইয়া পাড়ার কন্যাটি পুনরায় ঘরের ভিতর প্রবেশ করিল। বিনয়ের বন্ধুগণ বাহিরাবাটীতে প্ৰত্যাগমন করিলেন। বিনয়ের মাতা-পিতা-পুত্র ও পুত্রবধু লইয়া— মনের সুখে কালাতিপাত করিতে লাগিলেন । “ስዓbr দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.comf:লোক্যনাথ রচনাসংগ্ৰহ